মেহেরপুরের গাংনীতে শিলাবৃষ্টির কারণে বিনষ্ট ৮ কোটি টাকার কলা

ঋণগ্রস্ত চাষিরা পড়েছে বিপাকে : সরকারি সহায়তা না পেয়ে হতাশ
মাজেদুল হক মানিক: ধারদেনা ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে চাষ করা কলা বিক্রিতে সফলতার আশায় বুক বেধেছিলেন চাষিরা। কলার কাধি কাটার সময়ের মাইলফলক ছুইছুই। বাইরের জেলার ব্যাপারীরাও আসতে শুরু করেছিলেন। গত ৩০ মার্চ বিকেলে ১০ মিনিটের ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে পথে বসিয়েছে ৫ শতাধিক কৃষককে। শিলাবৃষ্টির আঘাতে কলার কাধি ও কলাগাছ ছিন্নবিছিন্ন। কোনো কাধির বেশিরভাগ কলা ফেটে চৌচির আবার কোনোটিতে ক্ষত। যা বিক্রির উপযোগী নয়। এমন অবস্থায় সরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে হতাশা বিরাজ করছে কলা চাষিদের মাঝে। কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদ। শিলাবৃষ্টিতে তার ৫ বিঘা কলা বিনষ্ট হয়েছে। শুধু মামুনুর রশিদই নয় রামনগর, ব্রজপুর ও ভবানীপুর গ্রামের চাষিদের ৭০০-৮০০ বিঘা জমির ৮ কোটি টাকার কলা বিনষ্ট হয়েছে। এতে পথে বসার উপক্রম চাষিদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক শিলাবৃষ্টির আঘাতে কলা, আম, ভুট্টা, রসুন ও ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বামন্দী, মটমুড়া, ষোলটাকা ও কাজিপুর ইউনিয়নের আংশিক এলাকার উপর দিয়ে শিলাবৃষ্টি হয়। এতে ওই এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়িরও ক্ষতি সাধিত হয়। অনেকের ঘরের চালের টিন ঝাঝরা হয়েছে। ভেঙে পড়েছে ঘরের ছাউনি।
রামনগর গ্রামের কলাচাষি জিয়াউর রহমান বলেন, গত ৩ বছর ধরে আমাদের এলাকায় সবরি জাতের কলা আবাদ হচ্ছে। কলা চাষ এ এলাকার প্রধান অর্থকরি আবাদ। এক বিঘা জমিতে আবাদ খরচ ৩০-৪০ হাজার টাকা হলেও গত ২ বছর বিঘায় ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। ফলে এবার কলার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছিলো।
একই গ্রামের চাষি রুহুল আমিন বলেন, কলাগাছ রোপণ থেকে ফল প্রাপ্তি পর্যন্ত ১৪ মাস সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময় চাষের খরচ জোগাতে চাষিরা কৃষি ব্যাংক গাংনী শাখা ও জনতা ব্যাংক বামন্দী শাখা থেকে কৃষি ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও বাকিতে সার কীটনাশক নেয়া হয়েছে। এখন কলা ক্ষেত বিনষ্ট হওয়ায় চাষিদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার উসমানপুর গ্রামের কলা ব্যবসায়ী আশাদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১০ লাখ টাকায় আগাম কলা গাছ কিনেছিলাম। এখন ক্ষেতের কলা বিক্রি উপযোগী নয়। তাই কলা কাটতে পারছি না। আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী চাষিদের মতোই পথে বসতে হচ্ছে।
রামনগর গ্রামের কলাচাষি ছহির উদ্দীন ও ইকতার আলী বলেন, ৫০-৬০ বছরের মধ্যে এতো বড় আকৃতির শিলাবৃষ্টি কখনও দেখিনি। চাষিরা এখন সর্বশান্ত। পরবর্তী ফসল আবাদের জন্য কলাগাছ ক্ষেত থেকে অপসারণ প্রয়োজন। সেই খরচও আমাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই ব্যাংকে ঋণ মওকুফ ও জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহায়তার দাবি জানান কৃষকরা।
জানা গেছে, শিলাবৃষ্টির পরের দিন কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন ও মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সহায়তার আশ^াস দিয়েছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চাষিরা সহায়তার মুখ দেখেননি বলে জানান কয়েকজন চাষি।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম সাহাব উদ্দীন বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পুর্ণাঙ্গরুপে নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, কৃষি অফিস ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আশ^াস দিয়েছেন শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ততের সহায়তা করা হবে। তাই তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক একটি তালিকা আমরা প্রেরণ করেছি।