নির্বাচন ঘিরে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি

খালেদা জিয়াকে ছাড়া ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা : নির্বাচনের আগে তার মুক্তি না পাওয়ার শঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। দলের কারারুদ্ধ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া-না পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনী সমীকরণ। তাদেরকে নির্বাচনে আনা এবং তাদের নির্বাচনে আসা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না তারা। আবার খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে আইনগত প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন সেই ভরসা ক্রমশ: ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। দলের নেতারা আশঙ্কা করে বলছেন-খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে, তাকে মাইনাস করে নির্বাচন করতে চাচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে জটিল হচ্ছে বিএনপির নির্বাচনে আসা। বিএনপির সমস্ত মনোযোগ এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে। তারা কি করবে তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে দলে। নেতারা বৈঠক করছেন, কথা বলছেন। খালেদা জিয়ার দিক-নির্দেশনাও পেয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আমাদের সামনে দুই চ্যালেঞ্জ। একটি হলো খালেদা জিয়াকে আইনগত প্রক্রিয়ায় বা আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা এবং অন্যটি হলো নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিশ্চিত করা। এই দুইটি না হলে নির্বাচনে যাওয়া অর্থহীন। সেটা বিএনপির জন্য কঠিন পথ। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনের বাইরে রাখাই এখন একমাত্র কৌশল আওয়ামী লীগের। সেটা কারাগারে রেখে হোক বা দেশের বাইরে পাঠিয়ে হোক-কোনোটাতেই আপত্তি নেই ক্ষমতাসীনদের। খালেদাকে কারাগারে রেখে জাতীয় নির্বাচন করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় তাকে বিদেশে পাঠাতে চায় সরকার। সেটা সুচিকিত্সার জন্যও হতে পারে অথবা অন্য কোনো কারণ দেখিয়েও হতে পারে। তিনি বলেন, সরকার আমাদের কোনো ‘স্পেস’ না দিলে আমরা কেনো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নির্বাচনে যাব? তবে এসব কার্যকর করা সরকারের জন্য কঠিন হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার সমঝোতার পথ কঠিন করে দিচ্ছে। আমরা আইনগতভাবে সফল না হলে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কঠোর আন্দোলন করবো। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। তার মুক্তি ছাড়া জনগণ নির্বাচন হতে দেবে না।’
এদিকে জানা গেছে, আইনগতভাবে লড়াইয়ের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য রাজনৈতিকভাবেও নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ এবং লিফলেট বিতরণের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কারামুক্তির পূর্বপর্যন্ত এভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন বেগম জিয়া। তবে এই ধরনের কর্মসূচিতে ভরসা পাচ্ছেন না দলের কেউ। দলের সিনিয়র নেতারা কারামুক্তির জন্য রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যেতে চাচ্ছেন। তারা এখনই তার প্রস্তুতি শুরু করার আহবান জানাচ্ছেন নেতা-কর্মীদের প্রতি।
গতকাল কারাগারে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ম্যাডাম শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন। খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আগে নির্বাচনসহ অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বিএনপি ভাবছে না। নেত্রীর মুক্তিই দলের প্রধান ও একমাত্র শর্ত । আগে তাকে মুক্ত করতে হবে। তারপর অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগে কিছু নয়। প্রয়োজনে রাজপথে নেমে আসতে হবে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্র করছে। এটা তারা পারবে না। সেই চ্যালেঞ্জই এখন আমরা মোকাবিলা করছি। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। তবে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে বিএনপি বসে থাকবে না। তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির পাশাপাশি এবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায় করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারও বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যা যা করার সবই করবেন তারা। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চার শর্ত পূরণ না হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। শর্তগুলো হচ্ছে- খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার কারামুক্তির মধ্য দিয়েই মামলার চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যাবে না। আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করাও নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া যেসব মামলা চলমান সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। শুধু দলের চেয়ারপারসন নয়, মহাসচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র অনেক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। যা নির্বাচনের আগেই রায় হয়ে যাবে। দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপির সিনিয়র নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসলেও বেগম জিয়া কারাবন্দি থাকা নিয়ে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। ফলে তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।