জীবননগরের তিন গ্রামের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য কচুরিপানার স্তূপই ভরসা

এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলার প্রতাপপুর, রঘুনন্দনপুর ও লক্ষ্মীপুর গ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। এ কারণে ওই তিন গ্রামের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার জন্য জীবননগর পৌর এলাকার আঁশতলাপাড়ার ভৈরব নদের পাড়ে অবস্থিত জীবননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। বিদ্যালয়টি তিন গ্রামের একবারে নিকটবর্তী হলেও মাঝ বরাবর ভৈরব নদ বয়ে গেছে। কিন্তু নদের ওপর কোনো সেতু না থাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে ওই তিন গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এ জন্য শিক্ষার্থীদেরকে অতিরিক্ত পৌঁনে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। ফলে শুকনো মরসুমে নদীর পানি কমে গেলে ওই তিন গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভৈরব নদের মাঝ বরাবর কচুরিপানার স্তূপের উপর দিয়ে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে থাকে। শুধু যাতায়াতের এ চরম দুর্ভোগের কারণে ওই তিন গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক পর্যায়েই ঝড়ে পড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতাপপুর, রঘুনন্দনপুর ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য তাদের প্যান্ট গুটিয়ে কচুরিপানার স্তূপের উপর দিয়ে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে ভৈরব নদ পার হচ্ছে।
শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না, ওই তিন গ্রামে বসবাসরত মানুষও জরুরি প্রয়োজনে কচুরিপানার স্তূপের উপর দিয়ে হেঁটে ভৈরব নদ পার হয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন।
প্রতাপপুর গ্রামের মনির হোসেন বলেন, প্রতাপপুর, রঘুনন্দনপুর ও লক্ষ্মীপুর গ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এ কারণে একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ভৈরব নদের ওপাশে অবস্থিত জীবননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। সন্তানরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। নদ পার হতে সমস্যা হওয়ায় অনেকে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী নদের ওপাশ থেকে নদ পার হয়ে আসে। যদি নদের উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয় তাহলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ইকতিয়ার আলী বলেন, ভৈরব নদের ওপর সেতু না থাকায় তিন গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ছে।
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল বলেন, ভৈরব নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য আমি ইতোমধ্যেই এলজিইডির পিডির নিকট আবেদন করেছি। কিন্তু উপজেলা পরিষদ পৌরসভার মধ্যে কোনো কাজ করার এখতিয়ার রাখে না। এ কারণেই ভৈরব নদের ওপরে সেতু নির্মাণের অনুমতি পেতে বিলম্ব হচ্ছে।