মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা ও প্রায়োগিক দিক বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

শিশুদের মানবাধিকার ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার: মানবাধিকার হচ্ছে মানুষের জন্মগত অধিকার মানবকূলে জন্মগ্রহণ করে আপনা-আপনি যে অধিকার ভোগ করা তার ওপর বর্তিয়ে যায়। আমাদের দেশে ২০০৯ সালে এটা ‘জাতীয় মানবাধকার কমিশন’ নামে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন এটা রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্ব বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার সাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারের যে কটি মৌলিক বিষয় রয়েছে তার মধ্যে নয়টিতে স্বাক্ষর করেছে। গতকাল বুধবার মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা ও প্রায়োগিক দিক বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে অনুষ্ঠানে আলোচনা করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শিশুর অধিকার সুরক্ষায় যথেষ্ট আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ মানুষই জানে না, শিশুদের ওপর নির্যাতন করা হলে শাস্তির বিধান রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তিকে অভিভাবক-শিক্ষক সবাই সাধারণ ঘটনা হিসেবেই ধরে নেন। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি। শিশুর ওপর যে কোনো ধরনের নির্যাতন বন্ধে সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে শিশু নির্যাতন বন্ধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, বিদেশে নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়তে থাকায় পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রবাসী নারী কর্মীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা স্বপ্ন পূরণে পাড়ি জমাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। তবে নানা হয়রানি আর নির্যাতনের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরে আসতে বাধ্য হন এসব নারী কর্মীর অনেকেই। নিয়োগ কর্তাকে চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য করাসহ দায়ী ব্যবসায়ী ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না গেলে নির্যাতন বন্ধ হবে না।
এজন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। আইনের ভেতরে থেকে কাজ করতে হবে। শিশুদের শাসনের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ইতিবাচক হতে হবে। তাদের সাথে আচরণ করবেন পূর্বের ন্যায়। আর লালন পালন করবেন বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তা হবে না। তাই অভিভাবকদেরও আচণনগত পরিবর্তন করতে হবে।
আইনের শাষণ কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে সে বিষয়টি মানবাধিকার কমিশন গবেষণা করতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের মানবাধিকার ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
চুয়াডাঙ্গায় মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা ও প্রায়োগিক দিক বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ওই কর্মশালার আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কলিমুল্লাহ, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নূর জাহান খানম ও আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক এসএম ই¯্রাফিল হোসেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ অমল, সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা, জেলা শিক্ষা অফিসার নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তী, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালের প্রধান শিক্ষ মাহফুজুল হোসেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার মালাকার, জীবননগর থানা অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুর রহমান, জেলা মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক হাবিবি জহির রায়হান, অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম, শঙ্করচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, সাংবাদিক শাহ আলম সনি, রাজিব হাসান কচি, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। কর্মশালায় প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মানবাধিকার সম্পর্কে ধারণা ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর মানবাধিকার ধারণা ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মো. খায়রুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ ফরিদ আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এএসএম শফিউল আযম, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, এনজিও সমিতির সভাপতি মোশারফ হোসেনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।