প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক

শিক্ষা জাতির মেরুদ-। যে জাতির মেরুদ-ের ভিত যতো বেশি মজবুত, সে জাতি ততো বেশি উন্নত। শিক্ষা মানুষের নৈতিক ও আত্মিক শক্তি জোগায়। শিক্ষা মানুষকে নৈতিক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক হওয়ার শিক্ষা দেয়। শিক্ষিত মানুষই দেশ-জাতির নেতৃত্ব দেয়। অথচ শিক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয় বাংলাদেশে বিপর্যস্ত। প্রশ্ন ফাঁস, ভর্তিবাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের পরীক্ষা ব্যবস্থা। এসএসসি-এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন আজ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় জীবনে গভীর অন্ধকার বয়ে আনছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর আগে পূর্বের মতো আশঙ্কা ছিলো প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে। তবে সরকারের কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণেই প্রথম দিনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। এবারে প্রায় ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। আড়াই হাজারের বেশি কেন্দ্রে সকাল ১০টায় প্রথম দিনের পরীক্ষা শুরু হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে যানজটের ঝক্কি সামলে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে হাজির হয়ে সাড়ে ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত আসনে বসেছে।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ডিজিটাল পদ্ধতিসহ নানা কৌশল নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এবার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৩০ মিনিট পরে যারা ঢুকতে চাইবে তাদের নাম রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর তালিকাভুক্ত করে রাখা হবে। কোনো শিক্ষার্থী বারবার দেরি করলে তাকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না। এমনকি তাকে আটক করা হতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২শ’ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তা কঠোরভাবে কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহভাজন লেনদেন হলে থানায় জানানোর কথাও বলা হয়েছে। একইভাবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ও প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায় করে তাদেরও এক ধরনের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের জঙ্গিদের মতো নিশ্চিহ্ন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থী প্রবেশের পর প্রশ্নের সেট লটারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারণ করে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশ্নের ট্রঙ্ক সিলগালা ছাড়াও বিশেষ ডিভাইস থাকার কথাও বলা হয়। ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন কেন্দ্রে পরিবহনে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন বহনকালে ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ (সংযুক্ত) অফিসারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষার দিন সকালে লটারি করে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সরকারের এসব সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রথম দিনের পরীক্ষায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শুধু সরকারের ভূমিকাই যথেষ্ট নয়, আমাদের অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষায় অর্জিত ফল সন্তানের ভবিষ্যতের পথে কোনো সুফল বয়ে আনবে না এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতি প্রশ্নফাঁসের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে এটা আমাদের প্রত্যাশা। আর যারা এই ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার চেষ্টা করবে, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a comment