চুয়াডাঙ্গায় চোখের ছানি অপারেশনে ২০ রোগী চোখ তুলে ফেলার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা

আজ আসছে বিএমডিসির তদন্ত দল : কাল আসবে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হেল্থ কেয়ার সেন্টারে ২০ রোগীর চোখের ছানি অপারেশনের পর একটি করে চোখ তুলে ফেলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৬টায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর আগে বেলা ১১টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চোখের ক্ষতিগ্রস্ত তিনজন রোগীর সাথে কথা বলেছেন তদন্ত দলের সদস্যরা। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, আলমডাঙ্গার খাসকররা গ্রামের লাল মোহাম্মদ (৭০), আলমডাঙ্গা সোনাপট্রির আবনি দত্ত (৭০) এবং আলমডাঙ্গার রংপুর গ্রামের এখলাস উদ্দিন (৪০)।
এদিকে, আজ বুধবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল ইম্প্যাক্ট হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শনে আসছে। প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় বিএমএ’র সহ-সভাপতি ডা. বাহারুল আলম। স্থানীয়ভাবে গঠিত তিন সদস্যের তদন্তদলের প্রধান সদর হাসপাতালে চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমন জানান, গত ২৮ মার্চ সিভিল সার্জন তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেন। নির্ধারিত সময় ২ এপ্রিলের ১দিন পর ৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন এবং জব্দকৃত নমুনা জমা দেয়া হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন ডা. আবুল হোসেন এবং ডা. তারিক হাসান শাহিন।
সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, তিন সদস্য তদন্ত টিমের সদস্যরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া, ঢাকা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় চুয়াডাঙ্গায় আসার কথা রয়েছে। তারা ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন সরেজমিন পরিদর্শন করবেন।
এদিকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ওই তদন্ত কমিটি কাল ৫ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে তদন্ত করবে। ওই দিন সমস্ত রোগীকে হেলথ সেন্টারে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একই সাথে রোগীদের যাতায়াত, খাওয়া দাওয়াসহ সমস্ত ব্যয় বহন করার জন্যও বলা হয়েছে ওই হেলথ সেন্টারকে। ১২ এপ্রিলের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কেদারগঞ্জপাড়ায় ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে গত ৫ মার্চ ২৪ রোগীর চোখে ছানির অপারেশন করা হয়। পরবর্তীতে তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন তারা। ২০ থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে ২০ নারী-পুরুষের ইনফেকশনের চোখগুলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তুলে ফেলা হয়। ২৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমনকে। ওই তদন্ত কমিটিকে ২ এপ্রিলের মধ্যে সিভিল সার্জন বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়। কিন্তু ২ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন না হওয়ায় একদিন পর মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্তদল।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অডিট) মো. মিজানুর রহমানকে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল-২’র উপ-পরিচালক মো. নূরুল ইসলামকে। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক (চক্ষু) ডা. সাইফুল্লাহ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ বিন শহিদ ও মহাখালীর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নূরুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, ৫ এপ্রিল ওই কমিটি চুয়াডাঙ্গায় ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে তদন্তে আসবে। ওইদিন ক্ষতিগ্রস্ত সকল রোগীকে হাসপাতালে তদন্তদলের কাছে উপস্থিত করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের এ তদন্তটিম আগামী ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।