মহেশপুরে ফসলি জমি নষ্ট করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা : কৃষি ভান্ডার হুমকির মুখে

মহেশপুর প্রতিনিধি: আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ঝিনাইদহের মহেশপুরের অধিকাংশ ইটভাটা। কয়লার পরিবর্তে পুড়ছে কাঠ। কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে চলছে ভাটা। মহেশপুরের কৃষি ভান্ডার এখন হুমকির মুখে।
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটার মালিক লোকালয়ে এমনকি ফসলি জমির ওপর অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করে কাঠ দিয়ে দেদারছে ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইট তৈরি এবং পোড়ানোর জন্য ইটভাটায় স্তুপ করা হচ্ছে হাজার হাজার মণ জ্বালানী কাঠ আর ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। গাছ কেটে জ্বালানী করার কারণে একদিকে যেমন পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনই আবাদযোগ্য জমির টপ সয়েল কেটে ফেলায় ফসলি জমি হারাচ্ছে তার উর্বর শক্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে ইট একটি প্রয়োজনীয় বস্তু হলেও নিয়ম না মেনে ইট তৈরির কারণে কষি জমি যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনই আবাদি জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা। অপরদিকে, সবুজ বেস্টনি উজাড় করে গাছ কেটে ফেলার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে সামাজিক পরিবেশ। এছাড়া ইটভাটার মালিকরা ইটের সাইজ ছোট করে সাধারণ জনগণের সাথে প্রতারণা করছে।
মহেশপুর উপজেলায় প্রায় ২৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৪-৫টি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি ইটভাটাগুলো বে-আইনীভাবে চলমান রয়েছে। অধিকাংশ ইটভাটাগুলো গড়ে উঠছে আবাদি জমির ওপর। সরকারি নীতিমালায় রয়েছে আধুনিক ইটভাটা স্থাপন করতে হবে এবং কাঠের পরিবর্তে কয়লা দিয়ে ইট পোড়াতে হবে। কিন্তু কয়েকটি ভাটা মালিক তা মানলেও বাকিরা সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুরাতন টিনের চিমনি পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত কর্মকান্ড আইন থাকলেও অধিকাংশ ভাটা মালিক তা মানছেন না। ২৪ ভাটার মধ্যে প্রায় ১৫ ভাটা মালিক টিনের চিমনি ব্যবহার করছেন। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এমনকি সড়কের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা স্থাপন সরকারি আইন লঙ্ঘন হলেও অধিকাংশ ভাটামালিক তা তোয়াক্কা করে না। ফলে ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া, ভাটার কাজে ব্যবহৃত ফিটনেছবিহীন গাড়ির ধূলাবালিতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগব্যাধি।
সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটা তৈরির কারণে যেমন আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনই ইট পোড়াতে ফলজ, বনজ, ঔষদি গাছসহ নানা প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ইটভাটা মালিকরা প্রতিবছর অইন লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেনো নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু তালহা বলেন, ইটভাটা তৈরির কারণে দিন দিন কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও ভাটাগুলো আবাদি জমিতে গড়ে ওঠায় ভাটার ধূলাবালি ও ধোঁয়ার কারণে পাশের জমির ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পৌরসভার ভেতরে র‌্যাডো ইট ভাটা দারুণভাবে পরিবেশ নষ্ট করছে। ওই ভাটার মালিক আব্দার রহমান জানায়, তারা ওপর মহলে ম্যানেজ করে ভাটা চালাচ্ছে যে কারণে পত্র-পত্রিকায় লিখলেও তাদের কিছু যায় আসে না।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের আইন অমান্য করে যারা ইটভাটা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।