গাছ লাগিয়ে তৃপ্তি পান মেহেরপুরের মনোরউদ্দিন

মেহেরপুর অফিস: গাছ জীবন ধারণের অপরিহার্য উপাদান অক্সিজেন দেয়। আরও দেয় খাদ্য হিসেবে ফল, জ্বালানি ও আসবাবপত্রের জন্য কাঠ। আর গরমে ক্লান্তি দূর করতে দেয় ছায়া। এছাড়া গাছের শিকড় মাটির ভাঙন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। মূল্যবান এ কথাগুলো আপন মনে রপ্ত করে গাছ লাগাতে শুরু করেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের উত্তরপাড়ার মনোরউদ্দিন (৪৫)। নিজের জমি নেই। তাই সুযোগ পেলে সরকারি জায়গায় অথবা অনুমতি পেলে অন্যের জায়গায় বট-পাকড়, আম-জাম ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে তিনি খুব তৃপ্তি পান। গাছ পাগল এ মানুষটি ইছাখালী গ্রামের নূর বক্সের ছেলে। প্রায় ১৮ বছর যাবৎ তিনি নদীর ধারে ভাঙন ঠেকাতে, সরকারি রাস্তার পাশে মানুষের ছায়া দিতে গাছ লাগিয়ে চলেছেন। এছাড়াও গ্রামের মসজিদ, স্কুল, ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে অনুমতি পেলে তিনি ফলজ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করে থাকেন। চারা রোপণ করেই তিনি খ্যান্ত হন না। ঘেরা-বেড়া, পানি ইত্যাদি দিয়ে তিনি ওই সব চারা গাছের যতœ নেন। এলাকাবাসীর দেয়া তথ্য মতে প্রায় দেড় যুগ ধরে তিনি এলাকায় শতাধিক ফলজ ও বনজ বৃক্ষ বড় করে তুলেছেন। এছাড়া বড় হওয়ার অপেক্ষায় আছে আরও কয়েকশ’ বৃক্ষ। ওই গ্রামের কলেজ ছাত্র তুহিন বলেন- ছোট থেকে দেখে আসছি তিনি বিভিন্ন সরকারি রাস্তা, নদীর ধারে এবং গ্রামের স্কুল ও মসজিদ চত্বরে গাছ লাগিয়ে পানি দেন, গোড়া পরিচর্যা করেন। গরু-ছাগলের হাত থেকে বাঁচাতে ওই সব গাছ ঘিরে দেন। সারাদিন কাজ করার পরে রাতে হলেও তিনি তার লাগানো গাছের গোড়ায় পানি দিতে ভোলেন না। ইছাখালী গ্রামের বাসিন্দা বদরুন্নেছা টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নূরুল বাশার বলেন- মনোরউদ্দিন শুধু গাছ লাগান না; অন্যকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বিভিন্ন মানুষের মাঝে গাছের চারা রোপণের জন্য বিতরণ করে থাকেন। কোনো লোকের জমিতে গাছ লাগাবার অনুমতি পেলে মনোরউদ্দিন গাছ লাগিয়ে ও পরিচর্যা করে বড় করে দেন। তিনি আরও বলেন- ইছাখালীতে সীমান্তের ১২৪ ও ১২৫ নং মেইন পিলারের মাঝে ভারত-বাংলাদেশের ৫২ একর অমিমাংসিত জমি নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও তৎকালীন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (ইপিআর) এর সাথে ১৯৫০ সালে যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর শহীদ হন তরিক উল্লাহ (সিপাহী নং ১৯১৮)। ইছাখালী মরানদীর পাশে অবস্থিত তার কবর ১ রাইফেল ব্যাটালিয়াল ১০ জুলাই ১৯৯১ সালে সংস্করণ করে দেন। দেরীতে হলেও মনোরউদ্দিন তার কবরের দক্ষিণ মাথায় একটি পাকড় গাছ লাগিয়েছেন শুধু নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ সিপাহী তরিক উল্লাহকে পরিচয় করে দিতে। দুই ছেলে সন্তানের জনক মনোরউদ্দিন বলেন- এক ছেলে ¯œাতক পাশ করে নানির বাড়ি গাংনী উপজেলার শানঘাট গ্রামে থাকে। অন্য ছেলে ফরিদপুর এলাকায় একটি এনজিও-তে চাকরি করে। বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী থাকি। নিজের জমি নাই তাই গাছ লাগাতে পারি না। বাকি জীবনটা অন্যের জমিতেই গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করে যাবো। এ ব্যাপারে মেহেরপুর বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ জামাল বলেন- মনোরউদ্দিন ইছাখালী গ্রামের মধ্যে বয়ে যাওয়া মরানদী ও বিভিন্ন সরকারি রাস্তার ধারে দীর্ঘদিন গাছ লাগিয়ে এলাকাবাসীকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছেন। আমি চেষ্টা করবো আগামী মাসিক মিটিংয়ে ইউএনও সাহেব কিংবা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহেবকে বলে সরকারী বিধি মোতাবেক তাকে একটি রাস্তার দু’ধারে গাছ লাগানোর অনুমতি দেয়ার।