বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই সুসংবাদ। স্বল্পোন্নত বা এলডিসিভুক্ত পঁয়তাল্লিশ দেশের মধ্যে মাত্র পাঁচটি দেশ গত বছর সাত শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। ফলে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে যে উন্নীত হতে যাচ্ছে তা আর দূরাশা নয়।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ৭ দশমিক এক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। পাশাপাশি জিবুতি অর্জন করেছে ৭ শতাংশ, ইথিওপিয়া ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, মিয়ানমার ৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং নেপাল অর্জন করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে যে চিত্র দেখানো হয়েছে তা বাংলাদেশ ক্রমঅগ্রগতির পথে জিডিপি থেকে। এটা ঠিক যে, এলডিসিভুক্ত অনেক দেশই এখনও প্রাথমিক পণ্য রফতানির ওপর নির্ভরশীল। প্রায় সব দেশই বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে, বিষয়টি অবশ্য নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এই ঘাটতি চলে আসছে। তবে আগের তুলনায় তা বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি জিডিপির এক শতাংশীয় ‘পয়েন্ট’-এর কম। সেদিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই অন্য দেশগুলোর তুলনায়। যেখানে ভুটান,গিনি, মোজাম্বিক, লাইবেরিয়ার বাণিজ্য ঘাটতি ২৫ শতাংশের বেশি। আবার রেমিটেন্সের দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। যেমন ২০১৭ সালে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোতে রেমিটেন্স এসেছে ৩৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পেয়েছে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তুলনায় নেপাল ৬ দশমিক ৬, হাইতি ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে চলছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার। এখনও অনেক সুবিধাবঞ্চিত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্থবির হয়ে আছে। ফলে বিশ্বে বৈষম্য বাড়ছে। এই অবস্থার অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে না এলে পতন অনিবার্য। এ দেশগুলোর উন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হলে এসডিজি যা টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে দুরূহ। আঙ্কটাড দেখিয়েছে ২০১৭ সালে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোতে গড় প্রবৃদ্ধি এসেছে ৫ শতাংশ। এর ফলে ব্যাহত হতে পারে সুসংহত ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
সরকারের দাবি- ‘বাংলাদেশ আর সাহায্যনির্ভর দেশ নয়, তলাবিহীন ঝুড়িও নয়।’ তাই বলে গড্ডালিকায় গা ভাসানোর সুযোগ নেই। স্বল্পোন্নত দেশগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তখনই অর্জন করতে পারে যখন তারা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের গতি বাড়াতে পারে। তার আগে দরকার স্বল্পোন্নত দেশের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসার পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা।