আলমডাঙ্গার খুদিয়াখালী আশ্রয়ণে অগ্নিকাণ্ডে ১০ পরিবার সর্বস্বান্ত : পরনের কাপড়টুকু ছাড়া অবশিষ্ট নেই কিছুই

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদসহ এলাকার অনেকেই : আবাসন মেরামতের আশ্বাস জেলা প্রশাসকের
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার খুদিয়াখালী আশ্রয়ণে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ১০ পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। এতে একটি ব্যারাকের ১০টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়েছে। শুক্রবার গভীররাতে এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আকস্মিক এ অগ্নিকা-ের ঘটনায় হতদরিদ্র ১০ পরিবারের নগদ লক্ষাধিক টাকাসহ ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছে গবাদি পশুসহ অসংখ্য হাঁস-মুরগি। সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারগুলোকে সহায়তা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে নগদ ১০ হাজার করে টাকা, তিনটি করে কম্বল, শুকনো খাবার ও চাল-ডাল সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো শিগগিরই মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের খুদিয়াখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবাসনে শতাধিক পরিবারের বাস। গত শুক্রবার দিনগত রাত ২টার দিকে আকস্মিক পশ্চিম দিকের ব্যারাকের ছাউনিতে আগুন দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো শেডে। ঘুমন্ত আবাসনবাসীরা কোনোভাবে ঘুম থেকে জেগে জীবন নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আগুনে একটি ব্যারাকের ১০ পরিবারের ১০টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়। রাতেই খবর দেয়া হয় দমকলবাহিনীকে। চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ঘরে রক্ষিত কোনো মালামালই রক্ষা করা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান। আবাসনের বাসিন্দা রাফেজা খাতুন জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন লাগার কারণে কেউই ঘর থেকে কিছু বের করতে পারেনি। শুধু পরনের কাপড়টুকু আর প্রাণ নিয়ে কোনোমতে ঘর থেকে বের হন তারা। এ ঘটনায় ৩টি ছাগলসহ অনেকের হাঁস-মুরগি পুড়ে মারা গেছে। আগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত উম্বাদের ছেলে কাদের, ইব্রাহীমের স্ত্রী সাগরী খাতুন, আরাধনের স্ত্রী আরা খাতুন, চাঁদ আলীর ছেলে শামীম হোসেন, আলী হোসেনের ছেলে কারন আলী ও বিপুল আলী, মোতালেবের ছেলে ফারুক হোসেন, বাবুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, ভাদুর ছেলে চাঁদ আলী, রাজ্জাকের স্ত্রী ফাতেমাসহ মাসুদ আগুনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন ‘রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ আগুনের ভয়াবহ তাপে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখি দাউ দাউ করে শেডে আগুন জ্বলছে। ঘর থেকে কোনো জিনিসই বের করতে পারিনি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ছুড়ে বাইরে বের করে দিতে হয়েছে। বাড়িতে থাকা ৩টি ছাগল ও অসংখ্য হাঁস-মুরগি পুড়ে মারা গেছে।’ আশ্রয়ণের বাসিন্দারা কেউ কেউ জানান, ফারুকের চুলো থেকে অথবা তার ঘরের বিদ্যুতের শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।’
গতকাল শনিবার সকালে অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসিম উদ্দিন, আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সীমা শারমিন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফকরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূরজাহান খানম, সহকারী কমিশনার সুচিত্র রঞ্জন দাস, জেলা পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম সাহান, জেলা পরিষদের সদস্য খলিলুর রহমান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের প্রধান সহকারী আব্দুল হান্নানসহ জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক রোকন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক এম সানোয়ার হোসেন, ইউপি মেম্বার ওহিদ আলী মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ৫ হাজার ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নগদ ৫ হাজার করে টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ কেজি চাল, ৩ কেজি করে ডাল, চিনি, তেল, চিড়া, মুড়ি, লবণ, ৩ ডজন ম্যাচ, মোমবাতিসহ ৩টি করে কম্বল দেয় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। পরে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ক্ষতিগ্রস্ত টিনশেডের ব্যারাকটি দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের আশ্বাস দেন। চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন‘ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ৫ হাজার ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকাসহ চাল-ডাল ও অন্যান্য উপকরণ সহযোগিতা করা হলো। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা করে ঘর মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, আগামীতে আগুন থেকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’
এর আগে সকালে জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বিশিষ্ট হাটব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান হান্নান ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক পরিবারকে এক হাজার করে টাকা ও চাল-ডাল কিনে দেন। এছাড়া জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও আলাদাভাবে কাপড়চোপড় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন বলে জানান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন।
এদিকে আশ্রয়ণবাসীদের অনেকেই জানান, তাদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাটেনি। তাদের চোখে মুখে এখনও ভয় লেগে আছে, আবার কখন কী হয়। তারা অনেকেই তাদের পুড়ে যাওয়া শেডেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন।