সতীনসহ শ্বশুর-শাশুড়ি আটক : স্বামী হাসাদুলের গাঢাকা

দামুড়হুদার জুড়ানপুরে গৃহবধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা

দামুড়হুদা/জুড়ানপুর প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় আরজিনা খাতুন (৩৫) নামের এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত গৃহবধু এক সন্তানের জননী আরজিনা খাতুন উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের হাসাদুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী এবং কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার হালসা শাকদহচর গ্রামের মৃত বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। গত শনিবার দিনগত রাতে তাকে শ্বাসরোধ রোধ করে হত্যার পর গলায় নাইলনের দড়ি পেঁচিয়ে বাড়ির একটি কুলগাছের মোটাডালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এ মর্মে অভিযোগ তুলে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে নিহত গৃহবধুর স্বামীর বসতবাড়ির কলপাড়ে পড়ে থাকা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত গৃহবধুর লাশের ময়না তদন্তের জন্য দুপুরে মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। বিকেলে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে নিহতের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন ও সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহসান হাবীব (পিপিএম) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধুর ভাই মওলা বক্স বাদি হয়ে স্বামী হাসাদুল, সতিন (হাসাদুলের ২য় স্ত্রী) মনোয়ার খাতুন, শ্বশুর আব্দুল খালেক ও শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে হাসাদুলের ২য় স্ত্রী মনোয়ার খাতুন (৩২), শ্বশুর আব্দুল খালেক (৭০) ও শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে (৬৫) গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও পালিয়ে গেছে নিহত গৃহবধুর স্বামী হাসাদুল।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের খালেক মেম্বারের ছেলে কৃষক হাসাদুলের সাথে প্রায় ২৫ বছর আগে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার হালসা শাকদহচর গ্রামের বিল্লাল ম-লের মেয়ে আরজিনা খাতুনের বিয়ে হয়। হাসাদুল প্রায় বছর ১২ আগে যশোরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে সংসারে শুরু হয় অশান্তি। হাসাদুল দ্বিতীয় বিয়ের পর অধিকাংশ সময়ই ২য় স্ত্রীকে নিয়ে যশোরেই থাকতেন। প্রথম স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে খোঁজ খবরই নিতেন না। সংসার চালাতে একমাত্র ছেলে ইমন দামুড়হুদা বাজারে হাফিজের মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ নেই। বর্তমানে ইমন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে। কাজের পাশাপাশি সে পড়ালেখাও চালিয়ে আসছে। সে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। হাসাদুল দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সম্প্রতি জুড়ানপুরে আসে। এ নিয়ে প্রথম স্ত্রী আরজিনা খাতুনের সাথে বাকবিত-া হয় হাসাদুলের। শনিবার রাতে তাদের মধ্যে পুনরায় বাগবিত-া হয়।
এদিকে নিহত গৃহবধুর একমাত্র ছেলে ইমন (১৫) বলেছেন, রাতে আমার ছোট মা অর্থাৎ আমার বাবার ২য় স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন, দাদি মনোয়ারা বেগম এবং দাদা আব্দুল খালেক পরিকল্পিতভাবে আমার মাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। ইমন আরও জানায়, শনিবার দিনগত রাত ১টার দিকে আমার ছোট মা মনোয়ারা খাতুন আমাকে বলে তোর মা ঘরে নেই। তাকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। তোর মাকে খুঁজতে হবে। এই বলে ডেকে নিয়ে মাকে খোঁজার অজুহাতে আমাকে মাঠের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে প্রাণভয়ে দৌড়ে গ্রামেই খালার বাড়ি পালিয়ে যায়। আমার ধারণা আমাকে মাঠে নিয়ে যেতে পারলে তারা আমাকেও মেরে ফেলতো।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আকরাম হোসেন বলেছেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর নিহতের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক হাসাদুলকে গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান অব্যহত রাখা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই জানা যাবে এটা হত্যা না কী আত্মহত্যা।