রাজনীতির টুকরো খবর

এমপিদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট বন্ধ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : তোফায়েল

স্টাফ রিপোর্টার: সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে রিপোর্ট বন্ধ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) গণমাধ্যমে যেভাবে বিভিন্ন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন, তাতে তাদের মান-ইজ্জত থাকে না। তাদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়। তারা তো জনপ্রতিনিধি। তাই এগুলো ঠেকাতেই এ আইন করা হয়েছে।’ গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে সম্মেলনকক্ষে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ডিসিসিআইর সভাপতি আবুল কাশেম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট বন্ধ করতে এ আইন করা হলেও আমার বিশ্বাস আপনাদের (সাংবাদিক) ঠেকানো যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ চিন্তা-ভাবনা করেই করা হয়েছে। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এ আইন করা হয়েছে। আগের আইসিটি অ্যাক্টটি বিএনপির সময়ে করা ছিলো। যেখানে অনেক বিষয় অস্পষ্ট ছিলো। নতুন আইনে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, যেকোনো অনিয়ম-অসদাচরণ তুলে ধরতে সাংবাদিকরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে থাকেন। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’তে সংযোজিত ৩২ ধারা সাংবদিকদের সেই জায়গা সঙ্কুচিত করে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাংবাদিক নেতা, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, আইনজীবীরা। তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় কোনও অনিয়ম তুলে ধরার জন্য এই আইনের ৩২ ধারা ব্যবহার করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনার সুযোগ আছে। সেটি সাংবাদিকের কাজের জায়গা সংকুচিত করে তুলবে।

যদিও গত সোমবার আইনটি পাস হওয়ার পর আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটিই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরে এলো কিন্তু সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘না। এ আইনে কোথাও কোনও ধারায় সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়নি।’

কূটনীতিকদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানাল বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকটি এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে চলে। এরপর বিদেশি কূটনীতিকেরা একে একে বিএনপির গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করেন। কূটনীতিকেরা গুলশান কার্যালয় ত্যাগের সময় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও মির্জা আব্বাস কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্রিফ করার কিছু নেই। কূটনীতিকদের সঙ্গে আমরা রুটিন মাফিক এসব করি। এটা প্রায়ই করি আমরা। আজকেও সে রকম একটা মিটিং ছিলো। স্পেশাল কিছু না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। শুধু মতবিনিময় হয়েছে এ পর্যন্তই।’ কূটনীতিকদের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তাহলে তো আমাকে চলে যেতে হবে। আগেই বলেছি, আমরা রেগুলার যে ব্রিফিং করে থাকি, সেটাই করেছি। সেই সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি ‘সাজানো’ ও ‘বানোয়াট’ বলে কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করা, বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা, সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা বেড়ে যাওয়ার বিষয়গুলোও কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরে দলটি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল কূটনীতিকদের বিষয়গুলো অবহিত করেন।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচারাভিযান বন্ধ করতে হবে। না হলে বিএনপিকে জনসভা করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, গতকাল থেকে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেমে গেছেন। স্পষ্টভাবে নৌকায় ভোট চেয়েছেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, ডিসেম্বরে ভোট হবে। এখন প্রশ্ন হলো, এখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আসলে কী? সাধারণত তফশিল ঘোষণার পর দু-তিন মাস নির্বাচনী প্রচার করা যায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কতোটুকু শক্ত? তিনি বলেন, সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচারাভিযান করা নির্বাচন কমিশনকে বন্ধ করতে হবে। না হলে বিএনপিকেও জনসভা করার সুযোগ দিতে হবে। মওদুদ আহমদ আরও বলেন, ‘আমরা আগে বলেছি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রচারাভিযান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা নয়। এখন দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেটে ভোট চাইছেন, আর আমাদের আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হবে।’

বৈঠকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, মরক্কো, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কুয়েত, সৌদি আরব এবং ভ্যাটিক্যান সিটির কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, কর্মী ‘ছিনতাই’

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার মোড়ে বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও প্রিজন ভ্যানের তালা ভেঙে আটক দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ দাবি করেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল থেকে অতর্কিতে হামলা চালান। প্রিজন ভ্যান ভাঙচুর করে বিএনপির আটক দু’কর্মীকে ছিনিয়ে নেয়, পুলিশের রাইফেল ভেঙে ফেলে। এতে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফুল আজিমসহ কয়েকজন আহত হন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজিরা দিয়ে ফিরছিলেন। দলের চেয়ারপারসনের আদালতে হাজিরার দিন প্রতিবারের মতো গতকালও নেতা–কর্মীরা হাইকোর্ট মাজার গেটে জড়ো হন। পরে বকশীবাজার থেকে বিএনপির আরেকটি মিছিল এসে এতে যোগ দেয়। পুলিশ দাবি করে, খালেদা জিয়া ফেরার সময় মিছিল থেকে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফুল আজিমের হাতের আঙুল ফেটে যায়। কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের হেলমেট ও রাইফেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কদম ফোয়ারার সামনে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান ছিলো। মিছিল থেকে কর্মীরা এসে ভ্যান ভাঙচুর করে এতে আটক থাকা দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। সেই সঙ্গে দুই পুলিশের রাইফেল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, খালেদা জিয়ার মিছিল পুলিশ সব সময় খুব ধৈর্যের সঙ্গে সামাল দেয়। গতকালও পুলিশ ধৈর্য ধরেছিলো। বিনা উসকানিতে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আজিমসহ কয়েকজন পুলিশ আহত হন। দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ছিনিয়ে নেয়া দুজনকে ঘটনার কিছু আগে হাইকোর্টের সামনে বিএনপির জমায়েত থেকে আটক করা হয়েছিলো।