ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ : রহস্য

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক বিন্নি গ্রামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে দরিবিন্নি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত বুধবার মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে একই গ্রামের নবিছদ্দির ছেলে মিল্টন, ঝান্টুর ছেলে মিন্টু, আনিছুর রহমানের ছেলে সেলিম ও ইমরুলের ছেলে রাজন পালাক্রমে নির্যাতন চালায়। এ ব্যাপারে হরিণাকুণ্ডু থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই ধর্ষকরা গাঢাকা দিয়ে আছে। তবে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে জোরদার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রী ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে মামলার বাদী জিয়া ও তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এসে জানান, তারা হতদরিদ্র মানুষ। সরকারি ক্যানালের ধারে ঘর উঠিয়ে বসবাস করেন। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ধর্ষক মিল্টন, মিন্টু, সেলিম ও রাজন ঘরে প্রবেশ করে তার মেয়েকে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে মেয়েকে বাড়িতে রেখে যায়।

বিষয়টি প্রথমে তিনি এলাকার মেম্বার ওলিয়ার রহমানকে জানান। তারপর হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশের দারস্থ হন। প্রথমে তিনি চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দিলেও মেয়ের জবানবন্দিতে দুই জনের নাম উল্লেখ করতে বলা হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে রহস্য দেখা দেয়। নির্যাতিত মেয়েটির সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে মিল্টন তারপর মিন্টু ও তৃতীয় দফায় সেলিম তাকে পাশবিক নির্যাতন করে। এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজন ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। অথচ মামলায় মিল্টন ও মিন্টুকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে পরিবারটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

চাপের কারণে ছাত্রী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দুই জনের নাম বলতে বাধ্য হয়েছে বলেও মেয়েটি জানায়। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি কেএম শওকত হোসেন জানান, ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি এমন কথা হাসপাতাল থেকে তাকে বিশেষ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ধর্ষণের ঘটনাটি ভুয়া মনে হলেও নারী নির্যাতন হিসেবে মামলা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে ওসি জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, বাদী দুই জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দিয়েছে। আদালতেও দুই জনের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ভিকটিম। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের সাথে আরও কেও জড়িত থাকলে কারো রেহায় দেয়া হবে না। কারণ বাদী ও তার পরিবার হতদরিদ্র ও খুবই অসহায়। তদন্তে চার জনের নাম আসলে চার জনকেই আসামি করা হবে বলে তিনি জানান। এদিকে মানবাধিকার তদন্ত টিমের মিসেস মিনু ভিকটিমের সাথে কথা বলে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার দিন রাতেই আলামত নষ্ট করে ফেলেছে ভিকটিম। ফলে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত নাও আসতে পারে। তবে ভার্জিন মেয়ে হিসেবে তাকে যে যৌনাচার করা হয়েছে এটা ডাক্তারি পরীক্ষায় আসলেও আসতে পারে। আলামত পাওয়া যাক আর না যাক মেয়েটির সাথে কথা বলে তাকে যে ধর্ষন করা হয়েছে এটা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে মানবাধিকার কর্মী মিনু সাংবাদিকদের জানান। এদিকে ধর্ষণের আলামত ডাক্তারি পরীক্ষায় আসবে না এমন কথা প্রচার হওয়ার পর এলাকার মহল ৫ লাখ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা ধর্ষক মিল্টন ও মিন্টুর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।