শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে শিক্ষকদেরকে আন্তরিক ও কোচিং-প্রাইভেট বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ

চুয়াডাঙ্গায় মাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে মতবিনিময়সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে শিক্ষকদেরকে আরও আন্তরিক হতে হবে। কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সময়মতো উপস্থিতি ও নিয়ম মেনে চলতে হবে। গতকাল সোমবার মাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর তিন আগে থেকেই সকল কোচিং বন্ধ রাখতে হবে।
গতকাল সোমবার বেলা ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ফরহাদ আহমেদ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তী, দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান।
জেলা প্রশাসক জেলার সার্বিক শিক্ষার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের জন্য ৩৯টি শর্ত জুড়ে দেন। শর্তসমূহের মধ্যে রয়েছে, সকল শিক্ষককে যথাসময়ে স্কুলে ও সমাবেশে উপস্থিত থাকা; বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিভাগের পাঠদান; কোনো শিক্ষককে এক বছরের বেশি একই শ্রেণির ক্লাস টিচার হিসেবে না রাখা; এনটিসিবির পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনো বই অন্তর্ভুক্ত না করা; পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে কোচিং পদ্ধতি চালু; বিদ্যালয়ে কোচিং, প্রাইভেট ও অতিরিক্ত পাঠদান বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’র অনুচ্ছেদ-৩’র বিধি অনুসরণ; সকল শ্রেণিকক্ষ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা; পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে সকল বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র স্থাপন; মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শ্রেণি পাঠদান পরিচালনা; ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে বিশেষ ক্লাস নেয়া; ক্লাসে পাঠদান চলাকালে শিক্ষকদের মোবাইলফোন ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধকরণ; শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালো আচরণ; স্কুল ড্রেসের রঙের বোরকা ও মনোগ্রামযুক্ত করা; বছরে তিন থেকে চারবার অভিভাবক সমাবেশ করা; যে বিষয়ে অকৃতকার্য বেশি, সে বিষয়ের শিক্ষককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা; বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখা; স্কুলে লাইব্রেরি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্নার, সততা সংঘ, সততা স্টোর ও কিশোরী ক্লাব স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে; বিজ্ঞানাগারের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সঠিক মাপের জাতীয় পতাকা সঠিকভাবে উত্তোলন করতে হবে ও জাতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল হোসেন, খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সিদ্দিক, ফাজিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আবুল হাশেম, লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কানিজ ফাতেমা ও হাড়োকান্দি-বলেশ্বরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরীফ রাজাসহ শিক্ষকম-লী বক্তব্য রাখেন। শিক্ষকরা দাবি করেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে তাঁরা আন্তরিক। কিন্তু এসএমসি ও জনপ্রতিনিধিদের চাপে তাঁরা ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। বিদ্যালয়ে গাইড ও নোটবই নিতে এসএমসির চাপ থাকে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসিম উদ্দীন এসব প্রসঙ্গে বলেন, শিগগিরই এসএমসি ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময়সভা করে তাদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে।