রাজনীতিকের বড় অর্জন মানুষের মনে জায়গা করে নেয়া

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ মরণশীল। জন্ম নিলে মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু কাজের মধ্যদিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নেয়াটাই একজন রাজনীতিকের বড় অর্জন। সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করে প্রয়াত নেতারা মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। যদি একজন রাজনীতিবিদ গণমানুষের পাশে থাকেন ও সবার সমর্থন পান, তাহলে অর্থ-বিত্ত-শক্তি কোনো কিছুই তার সঙ্গে পেরে ওঠে না।

গতকাল রোববার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম শীতকালীন অধিবেশনের শুরুর দিনে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রয়াত নেতাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদায়ী বছরে অনেক নিষ্ঠাবান নেতাকে আমরা হারিয়েছি। প্রয়াত মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তার কাজের সফলতায় মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ সৎ হলে দেশ এগিয়ে যায়। ছায়েদুল হককে আমরা সেই রকমই একজন মন্ত্রী হিসেবে পেয়েছিলাম। তিনি এমনই একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন যে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।’ সংসদ নেতা বলেন, ‘২০০১ সালে আমাদের পরিকল্পিতভাবে পরাজিত করা হয়। তখনো ছায়েদুল হক বিজয়ী হয়েছিলেন।’

আবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের গোলাম মোস্তফা তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির যে প্রার্থী ছিলেন, তিনি বিদেশ থেকে এসেছিলেন, অর্থ-বিত্তশালী ছিলেন। ওই এলাকাকে জাতীয় পার্টির এলাকা বলা হয়। কিন্তু তৃণমূলে গোলাম মোস্তফার যে সম্পর্ক ছিল, সাধারণ মানুষের প্রতি যে দরদ ছিলো, তার প্রতি মানুষের যে সমর্থন ছিলো, সেই সমর্থনে তিনি জয়ী হয়ে আসেন। আসলে একজন রাজনীতিবিদ যদি গণমানুষের পাশে থাকেন, মানুষের সমর্থন পান তাহলে অর্থ-বিত্ত-শক্তি কোনো কিছুই তার সঙ্গে পেরে ওঠে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস চালাত, সেখানে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করতো। সেখানে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ চালিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল সন্ত্রাসের মধ্যেও অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নির্বাচিত হয়ে আসেন। দুর্ভাগ্য, আততায়ীর গুলিতে লিটন নিহত হন।’ তিনি বলেন, এরপর একেবারে তৃণমূলের একজন নেতা গোলাম মোস্তফা আহমেদ সেখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সবসময় আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি একেবারেই তৃণমূলের মানুষ। ইউনিয়নেই থাকতেন। তিনি একজন ভালো লেখক, কবি, একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। তৃণমূলের সঙ্গে মিশে যাওয়া একজন নেতা ছিলেন তিনি। জনপ্রিয়তার কারণে তিনি নির্বাচিত হয়ে আসেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। প্রয়াত ওই দুই সংসদ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।