বিদায়ী বছর যাতায়াতকারী যাত্রীদের সংখ্যা স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙেছে

দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে

হারুন রাজু: দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত বিদায়ী ২০১৭ সালে সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাস্টমস্ ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এক বছরে ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে এ রুটে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবারও চালু হয়। এসময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেটে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচল শুরু হয়। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা স্টেশনের ওপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস্ চেকপোস্ট স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ট্রেন লাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছুতে হতো। বর্তমানে রেল লাইনের পাশ দিয়ে পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবির উদ্যোগে রাস্তার দু’ধার দিয়ে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান, তা যেন আগতদের সর্বদা অভিবাদন জানাচ্ছে। অপরদিকে, ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছে। বাংলাদেশের যেকোনো সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার সাথে ঢাকার দূরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ রুটে যাত্রীদের চলাচল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতের বছর গুলোতে যেখানে সারা বছরে ২-৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো, সেখানে ২০১৬ সালে এ রুটে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৭ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৯৮১ জন ভারতীয় এবং ৪৭ জন অন্যান্য দেশি। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৬ জন বাংলাদেশি, ১৩ হাজার ৪৩৮ জন ভারতীয় এবং ৫৫ জন অন্যান্য দেশি। অপরদিকে, বিদায়ী ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ২ লাখ ৪০ জন বাংলাদেশি, ১৪ হাজার ৭০২ জন ভারতীয় এবং ১০৩ জন অন্যান্য দেশি। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৪৮ জন বাংলাদেশি, ১৪ হাজার ৯০৪ জন ভারতীয় এবং ৮৪ জন অন্যান্য দেশি অর্থাৎ গত বছর সর্বমোট ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জনের রেকর্ড পরিমাণ যাত্রী যাতায়াত করেছে। বাংলাদেশি যাত্রীদের হঠাৎ ভারতমুখী হওয়ার পিছনে যে সমস্ত কারণগুলো রয়েছে, তার মধ্যে ভারত কর্তৃক ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ, দেশের তুলনায় ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত ও বিশ্বাসযোগ্য এবং দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের প্রবনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। তবে দর্শনা রুটে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চেকপোস্টের সাথে দর্শনার সংযোগ সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি চেকপোস্টে ভ্রমণ ট্যাক্স পরিশোধের সুবিধার্তে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ খোলা প্রয়োজন, কারণ কোনো যাত্রী ভুলক্রমে ট্রাভেলট্যাক্স প্রদান করে না আসলে তাকে আবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দর্শনায় ফেরত আসতে হয়। একই সাথে ঢাকা-খুলনাগামী ডাউন আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের দর্শনা হল্ট স্টেশনে স্টপেজ দিলে ঢাকা থেকে আগত যাত্রীদের জন্য এ পথ আরও সহজ হবে। তবে যাত্রী যাতায়াত বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছিলো চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় দালাল চক্রের বেপরোয়া দৌরাত্ম। বর্তমান চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের নবাগত পরিচালক জনাব ইমাম হাসান ও পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের কঠোর ভূমিকার কারণে চেকপোস্ট এলাকা বর্তমানে সম্পূর্র্ণভাবে দালালমুক্ত হওয়ায় যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারছে। এখন আর নেই ইমিগ্রেশন, কাস্টমস্ ও বিজিবির নাম ভাঙানো দালালচক্রের সদস্য। দর্শনা ইমিগ্রেশনের নবাগত কর্মকর্তা এসএম আব্দুল আলিম জানান, সীমিত সামর্থের মধ্যেও আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবার চেষ্টা করছি, বর্তমান নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ভবন চালু হলে যাত্রী সেবা আরও বৃদ্ধি পাবে।