চুয়াডাঙ্গার বই-পুস্তক বিক্রির দোকানে লাখ লাখ টাকার গাইড প্রস্তুত

শিক্ষকদের অনেকেই প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের দেয়া উপঢোকনে প্রভাবিত হয়ে কৌশলে দেন কেনার পরামর্শ

কামরুজ্জামান বেল্টু/তৌহিদ তুহিন: চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ বই-পুস্তক বিক্রির দোকানে লাখ লাখ টাকার গাইড বই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গাইড বই প্রস্তুতকারক ও প্রকাশক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাবশালী শিক্ষকদের উপঢোকন দিয়ে তাদের গাইড বিক্রির পথ পরিষ্কার করেছে। আজকালের মধ্যেই গাইড বিক্রির ধুম পড়বে বলে দোকানিরাও সকল প্রকারের প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে। অথচ মেধাবিকাশে বা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে গড়ে তোলার স্বার্থে সকল প্রকারের নোটবই ও গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ।
সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেণির সকল পাঠ্যপুস্তকই বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। আগে বাংলা ইংরেজি ব্যাকরণ বিনামূল্যে বিতরণ না করার কারণে পুস্তুত প্রকাশক প্রতিষ্ঠানগুলো তা নিয়েই বাণিজ্যের ফাঁদ পাততেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বিশেষ হারে কমিশন দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে উপঢোকনের বিনিময়ে নির্দিষ্ট গ্রামার বা ব্যাকরণ কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হতো। যে বই প্রকাশের খরচ ৫০ টাকা, তা বিক্রি করা হতো দেড়শ থেকে দুশো টাকা মূল্যে। গত দু’বছর ধরে বাংলা ইংরেজি গ্রামারও বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে সেই ব্যবসার ফাঁদে খরা দেখা দিলেও নোটবই ও গাইড বই নিয়ে বেশামাল মাতামাতি শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর মাস জুড়েই প্রকাশক কোম্পানির প্রতিনিধিরা লাখ লাখ টাকার উপঢোকন দিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও প্রভাবশালী শিক্ষকসহ মাদরাসার শিক্ষকদের প্রভাবিত করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। যেসব গাইড বিক্রির জন্য চুয়াডাঙ্গায় লাখ লাখ টাকার আগাম বিনিয়োগের খবর রয়েছে তার মধ্যে জুপিটার সবার শীর্ষে। পাঞ্জেরী, অনুপম, লেকচারও রয়েছে প্রতিযোগিতার সারিতে। এছাড়াও দ্বিগন্ত, স্কোয়ার, জননী, আদিদ, পলকসহ নানা নামের গাইড রাখা হয়েছে বই-পুস্তক বিক্রির দোকানের পেছনের র‌্যাকে। সামনের র‌্যাকে হাদিস আর গল্পের বই খাতায় ভরিয়ে রাখা হলেও আড়ালে লাখ লাখ টাকার গাইড রাখা হয়েছে। অবশ্য প্রশাসনের তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত না হলে ওই গাইডও উঠে আসবে সামনের র‌্যাকে।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪৪৪টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩৭, মাদরাসা ৩৯টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের নির্দিষ্ট নামের গাইড কিনতে উদ্বুদ্ধ করার আড়ালে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে ওই প্রকাশক কোম্পানির দেয়া উপঢোকন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সব শ্রেণিরই গাইড কেনার জন্য কৌশলে উদ্বুদ্ধ করেন শিক্ষকদেরই কেউ কেউ। এতে প্রধান শিক্ষকেরও সমর্থন থাকে। এসবের আড়ালেও কমিশন। অথচ নোট বই বা গাইড বই বিক্রি এবং কেনা বারণ। চুয়াডাঙ্গার এক প্রস্তুক বিক্রেতা বলেছেন, আমাদের সমিতি আছে। আমরা ইচ্ছে করলেই সবকিছু যেমন প্রকাশ করতে পারিনে, তেমনই এসব অবৈধ বই বিক্রির জন্য কারা কতো টাকার কমিশন নেয় তা জেনেও আমাদের বলার জো নেই। কিছু বললেই সমিতি থেকে বের করে বইয়ের ব্যবসাই বন্ধ করে দেবেন নেতারা। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা বলেন, বিষয়টি প্রশাসনেরও অজান নয়। কেন, কোনো গাইড বেশি বিক্রি হয় তা যেমন শিক্ষানুরাগীদের অজানা নায়, তেমনই অস্বাভাবিক মূল্য দিয়েই অভিভাবকেরা কিনতে বাধ্য হন। নবম শ্রেণির গাইডের দাম আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, ৮ম শ্রেণির গাইডের দাম সাড়ে ৯শ থেকে এক হাজার টাকা, ৭ম শ্রেণির গাইড ৬৬০, ৫ম শ্রেণির গাইড ৫২০ টাকা। এসব গাইডের দাম চড়া হওয়ার আড়ালে শিক্ষকসহ অনেকেরই উপঢোকনের খরচ পুশিয়ে বাড়তি মুনাফা।