দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে ফিরে যাবো না

আমরণ অনশনে ননএমপিও শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার: এবার আমরণ অনশনে নেমেছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ৫দিনের কর্মসূচি শেষে গতকাল রোববার আমরণ অনশন শুরু করেন তারা। সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে অনশন কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আমরণ অনশনে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অংশগ্রহণ করছেন। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন, অচিরেই প্রধানমন্ত্রী সকল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসাথে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিবেন। আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, আমরা জেএসসি পরীক্ষার ফল বয়কট করেছি। ১ জানুয়ারির বই উৎসবও বয়কট করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত  স্কুলে ফিরে যাব না।

দেশের সরকারস্বীকৃত সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন এসব শিক্ষক। অনশনে উপস্থিত কমবেশি সবার বক্তব্যই এ ধরনের। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে এ কর্মসূচি চলছে। গত শুক্রবার ফেডারেশনের নেতারা বৈঠক করে গতকাল থেকে অনশন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেন। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ দেয়া হয়, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলা হয়। আর যেগুলো এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। এগুলোকে সংক্ষেপে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলা হয়। বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখের বেশি। এর বাইরে স্বীকৃতি পেলেও নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিলো।

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ ১১ দফা দাবিতে এবার অবিরাম ধর্মঘটে যাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী এমপিওভুক্ত নয়টি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের মোর্চা শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রাম কমিটি। আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধর্মঘট শুরু হবে। তার আগে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে। রোববার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন কমিটির সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হক। এ সময় মোর্চার অন্তর্ভুক্ত সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে আসাদুল হক বলেন, এই দাবিতে তারা এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকী অনশন এবং ঢাকায় সমাবেশসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এ কারণে তারা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২২ জানুয়ারি থেকে অবিরাম ধর্মঘটের আগে ৯ জানুয়ারি সব উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। একই দিনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। ১৪ জানুয়ারি জেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। এদিন কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একই কর্মসূচি শেষে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেয়া হবে। এছাড়া ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করা হবে।