চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে গির্জায় গির্জায় ছিলো বিশেষ আয়োজন
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এ দিনে ফিলিস্তিনের বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরা যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপন করেন। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটেছিলো।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন উদযাপন করেছে। ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে গতকাল সোমবার ছিলো সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপ্রতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দেন। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি হয়, ছিলো বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসে। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন। গত রোববার রাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় বলে গির্জা সূত্রে জানা গেছে। উৎসবের এ আমেজ দেখা যাচ্ছিলো প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই, অনেককেই দেখা গেছে নতুন জামা-কাপড় পরে প্রতিবেশীদের বাড়ি যাচ্ছেন, কেউবা উৎসব করছেন নিজ বাড়ির আঙ্গিনাতেই। এ আনন্দ উদযাপন যাতে নির্বিঘেœই হয় সেজন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর দেখা গেছে ওই এলাকায়।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ও বাঘাডাঙ্গায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ধর্মানুসারীরা যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপন করেছে। দিনটি উপলক্ষে গতপরশু রাত ১২টায় কেককেটে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন ধর্মানুসারীরা। এরপর গতকাল সোমবার সকালে চার্চ ও ক্যাথলিক গির্জায় মূল অনুষ্ঠান প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শুরু করে আনুষ্ঠানিকতা। দিনব্যাপী কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর হয়। বড়দিন উপলক্ষে গির্জার মূল ফটকের বাইরে বসেছে মেলা। আজ মঙ্গলবার থেকে গির্জা প্রাঙ্গণে খেলার মাঠে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতি ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে খেলাধুলার প্রতিযোগিতা শুরু হবে। শুভ বড়দিন উপলক্ষে কার্পাসডাঙ্গা ও বাঘাডাঙ্গার মিশন পল্লীতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কার্পাসডাঙ্গা চার্চের সম্পাদক নিমু ম-ল জানান, সকলের সহযোগিতায় এবারের শুভ বড়দিন আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করছি। দিনটি উপলক্ষে তিনি সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ কার্পাসডাঙ্গা ও বাঘাডাঙ্গা খ্রিস্টান পল্লি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি জগবন্ধু ধর, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সিংহ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সুধীর কুমার সান্তারা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক নারায়ন ভৌমিক, জেলা সদস্য নিমু ম-ল, আনন্দ কুমার ঘোষ, অজয় কুমার ঘোষ প্রমুখ। জেলা নেতৃবৃন্দ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে মতবিনিময় করেন এবং নেতৃবৃন্দ বলেন, হিংসা বিদ্বেষ অন্যায় অত্যাচারে ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই যিশুর আবির্ভাব হয়েছিলো। তিনি সারাজীবন আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করেছেন। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে সবাইকে শান্তি সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। গির্জাগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা বলয় দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন নেতৃবৃন্দ।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের মুজিবনগরে পালিত হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। ২৫ ডিসেম্বর রাত ১২টায় উপজেলার ১৭টি গির্জায় কেককাটা ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। সকাল থেকে গির্জায় গির্জায় চলেছে উপাসনা। ঈশ্বরের আশীর্বাদ, দেশ ও জাতীর কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা করেছেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। ২৫ ডিসেম্বর গরিবের গোয়াল ঘরে মা মরিয়মের গর্ভে জন্ম নেয় ঈশা মসিহ। তার আগমনের এ দিনটি নানা উৎসবের মধ্যদিয়ে পালন করেছেন তারা। খ্রিস্টান পল্লিগুলোর বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে গোশালা। যুবক যুবতিরা কীর্তনের মধ্যদিয়ে খ্রিস্টান বাণী সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবেন। এছাড়াও ভক্তরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ, দেশ ও জাতির কল্যাণে কামনায় গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা করছেন। আলোচনা করা হচ্ছে আধ্যাত্মিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। এ উপলক্ষে গির্জাগুলোতে ভিড় করতে থাকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ। ধর্মীয় আলোচনার পাশাপাশি দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে প্রভু যিশুর প্রার্থনা করা হয়। পরে কেককেটে সবাই আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি খাবার বিনিময় করেন। ধর্মগুরুরা জানান, বড়দিন আমাদের জন্য যিশুর একটি আশীর্বাদ। এ দিনে আমরা দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করি।