কৃষকদের সুবিধার্থে সরকারই চেয়েছিলো চালের দাম বাড়ুক : অর্থমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কৃষকদের সুবিধার্থে সরকারই চেয়েছিলো চালের দাম বাড়ৃক, কিন্তু দাম ৫০ টাকার ওপরে চলে যাওয়ায় তা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, চালের দামের কারণে অনেক অসুবিধা হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চেয়েছিলাম চালের দাম কিছুটা বাড়–ক, তবে দামটা অনেক বেড়ে গেছে। আগে অনেক কম ছিলো, সেটা ভালোই ছিলো, ৫০ টাকার ওপরে ওঠে যাওয়াতে কিছু লোকের খুব অসুবিধা হয়েছে। এটা এখন নিয়ন্ত্রণে আসা দরকার। উৎপাদন বাড়লে আবারও দাম কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নর জবাবে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

চালের দাম বৃদ্ধির কারণে ৫ লাখ মানুষ গরিব হয়েছে, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের এই রিপোর্টটির দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এগুলো তাৎক্ষণিক রিপোর্ট। এগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। দাম বাড়ার কারণে কতো শতাংশ দারিদ্র্যের হার বেড়েছে সেটা এখনই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। গরিব লোকের সংখ্যা কমছে বা বাড়ছে- এটার জন্য অন্তত পক্ষে বছর খানেক দেখা দরকার। কিন্তু এটা ঠিক যে চালের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের অনেক অসুবিধা হয়েছে। আগামীতে উৎপাদন বাড়লে চালের দাম কমে আসবে। এদিকে চালের দাম বৃদ্ধিতে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এছাড়া চালের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় দারিদ্র্যের কবলে পড়েছেন দেশের ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ। গত শনিবার এমন তথ্য দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেমের বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক মাসে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ গরিব হয়ে গেছে। আগে তারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে ছিলো, এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন। বন্যার পাশাপাশি সময়মতো আমদানি না হওয়ার এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যার কারণে গত কয়েক মাসে হঠাৎ করে চালের দাম গড়ে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি করার পরও চালের দাম বেড়েছে। এটা বেশ উদ্বেগজনক। সানেম বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এতে সামনের দিনগুলোতে আমদানি ব্যয় বাড়তে পারে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকার চাল আমদানি করা হয়েছে। গতবার একই সময়ে মাত্র ৩৫ কোটি টাকার চাল আমদানি করা হয়েছিলো।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নতুন আমান ধান উঠলেও দাম বেশী। এছাড়া ভারতে চালের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আমদানি করা চালের দাম বেড়েছে। তারা বলেন, গত বোরো মরসুমে হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার যে ক্ষতি তা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। যে কারণে সরকারের অক্টোবর-নভেম্বরের শুরুতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৪২ টাকা থাকলেও এখন তা ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরু চালও কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে মানভেদে ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৬ টাকায়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) দাম বাড়ার এ তথ্য তুলে ধরেছে। তবে ধানের দাম বাড়লেও এ বাড়তি দর যাচ্ছে না কৃষকের পকেটে। কারণ, এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা কম দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে পরে তা মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি করছে।

দেশের চালকল মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ রাইস অটো, মেজর, হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম লায়েক আলী সাংবাদিকদের বলেন, এবার আমনের ফলন কম হয়েছে। তাই চাহিদা মতো ধানের সরবরাহ নেই। ফলে ধানের দাম বেশি। ধানের দাম বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই চালের দামও বেশি। তিনি বলেন, ভারতে চালের দাম বেশি। যে কারণে আমদানি করা চালের দাম বেশি পড়ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালের দাম কমার কোনো কারণ দেখি না। সরকার নিজেই ৩৯ টাকা কেজি দরে চাল কিনছে। ধান-চালের দাম বেশি বলেই সরকার এ দর নির্ধারণ করেছে। তাই আগামী বোরো মরসুমের আগে চালের দাম কমার কোনো কারণ দেখি না।