নির্বাচনমুখী ভিন্ন মাত্রার বাজেট তৈরির কাজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনের পালে বাতাস পুরোপুরি না লাগলেও, নির্বাচনমুখী ভিন্ন মাত্রার বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই মেয়াদের সরকারের এটাই হবে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট। নির্বাচনের পরে এসে আবার সংশোধনের মধ্যে পড়ে যাবে পুরো বাজেট। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুত্ব তেমন কিছু না থাকলেও, কোনো কোনো বিষয় অগ্রাধিকার পাবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ। পাশাপাশি চলমান সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরো নিবিড় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রয়োজনে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে তেমন নতুনত্ব না থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে চলমান সংস্কার কর্মসূচিকে আরো ত্বরান্বিত করা হবে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন করা হবে। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যে সব ভাতা রয়েছে সেগুলো বিকাশে কিংবা অন্য ডিজিটাল পন্থায় দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ভর্তুকি বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনো সময় আসেনি। অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তিনি আরো জানান, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বাজেটে দারিদ্র, নারী উন্নয়ন ও জলবায়ু বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পাবে। আর এবার বাজেটে নতুন মাত্রা হিসেবে বরাদ্দ থাকবে রোহিঙ্গাদের জন্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আভাস দিয়েছেন। সেই আভাস অনুযায়ী বাজেটের আকার হতে পারে সাড়ে ৪ লাখ কোটির কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিলো ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এর আকার কিছুটা কমে আসবে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সংশোধিত বাজেটে হবে ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। এর কারণ হিসেবে মূলত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার বিষয়টি ধরা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মনে করছে, চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এখনো অনেক সময় রয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি বলা যাবে না। অর্থমন্ত্রী অবশ্য নিজেই স্বীকার করেছেন, চলতি বছর রাজস্ব আহরণের গতি-প্রকৃতি বেশ ভালো। অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকতা জানান, প্রথম রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বিষয়টি যখন ধরা হয় তখন নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়নের বিষয়টি ছিলো। পরে ভ্যাটের নতুন আইন বাস্তবায়ন স্থগিত হওয়ার প্রেক্ষিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশ কিছুটা সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আর সেই সূত্র ধরে সরকারের ব্যয়ও কমাতে হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী নতুন অর্থবছরে জনগণ বা ব্যবসায়ীদের ওপর তেমন কোনো চাপ থাকবে। এর মূল কারণ নির্বাচন। বাজেটে নতুন কোনো কর না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর বিষয়টি লক্ষ্য থাকবে। গুরুত্ব পাবে রাজস্ব আহরণের নতুন নতুন ডিজিলাইজেশন ব্যবস্থা। জুন মাসের নতুন বাজেটের প্রভাব যেন কোনোভাবেই নির্বাচনের ওপর না পড়ে। তবে বর্তমান সরকার আবার যদি জনগণের রায় পায় তবে পরবর্তী অর্থবছরে একদিকে যেমন নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে, তেমনি রাজস্ব আহরণের নতুন সম্ভাবনার দিকে হাত প্রসারিত করা হবে। আপাতত আগামী বছরের নতুন বাজেট বেশ কিছুটা স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সরকারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা লাগাম টেনে ধরার প্রচেষ্টা থাকবে।

এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করেছে। আর সে বিষয়টি হচ্ছে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদ করা। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেগুলো অর্জন নিশ্চিত করার জন্য মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতিতে বাজেট তৈরি করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় তিনটি পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে কৌশলগত পর্যায়ে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রাক্কলন পর্যায়ে, আর তৃতীয়টি হচ্ছে অনুমোদন পর্যায়ে। পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ও প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয় সীমা। কারণ, প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন ও লক্ষ্যমাত্রার তৈরির সময় বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ কমে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ব্যয়ের সীমাও কমে আসবে। উন্নয়নমূলক ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। যে কারণে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার অনুরোধও রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিবারের মতো আগামীতেও বাজেট বিষয়ক ভিন্ন ভিন্ন পুস্তিকা প্রকাশ করা হবে। এমনকি, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে বই প্রকাশ করা হতে পারে। এ ছাড়া সরকারের গত কয়েক বছরের বিভিন্ন সাফল্যগাথা নিয়ে একগুচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।