শীতল সন্ধ্যায় আগুন পোয়াতে বসে বৃদ্ধ অগ্নিদগ্ধ : নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে : স্বয়ং জেলা প্রশাসক রাস্তায় নেমে বিতরণ করলেন শীতবস্ত্র

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত জেকে বসেছে। পৌষের কনকনে শীতে গরিব দুঃখিদের অনেকেই শীতবস্ত্রের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এদের একটু স্বস্তি দিতে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত শীতবস্ত্র বিতরণে গতরাতে স্বয়ং জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ স্বশরীরে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। অপরদিকে তীব্র শীতে আগুনের উষ্ণতা নিতে চুলার পাশে বসে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার বড়গাংনী পশ্চিমপাড়ার ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ পুটে মোল্লা। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া শীতে শিশুদের মধ্যে নিউমনিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দেড় বছর বয়সী শিশু সিয়াম গতরাতে মারা গেছে।
গতপরশু চুয়াডাঙ্গায় সুর্য্যের মুখ দেখা না গেলেও গতকাল বুধবার দুপুরে ঝলমলে রোদ কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। অনেকেরই রোদে বসে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাঙ্গামাটিতে ২৯ দশমিক ২ ও সর্বনিম্নদিনাজপুর ও তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক শূন্য ও সর্বনিম্ন১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিলো বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়ার পূর্বভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার বায়ুম-লের নিম্নস্তরে বায়ুর ঘূর্ণন বিরাজ করছে। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ফলে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাপমাত্রা সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তীত থাকতে পারে। ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। ৫ (পাঁচ) দিনের রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগ থেকে হতদরিদ্রদের স্বস্তি দিতে গতরাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নিজেই শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্দেশে রাস্তায় বের হন। তিনি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন, হাসপাতালসহ জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কের ধারে ও বস্তির পাশে নারী পুরুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় সাথে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুর রাজ্জাক, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াশিমুল বারীসহ কর্মকর্তাদের অনেকে। শীতবস্ত্র বিতরণকালে চুযাডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বলেন, গতবারের বরাদ্দকৃত শীতবস্ত্রের মধ্যে ৭ হাজারের মতো শীতবস্ত্র উদ্বৃত্ত ছিলো। সেখান থেকেই জেলা প্রশাসনের তরফে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি শীত মরসুমে গরিব দুঃখিদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৩ হাজার ৬৫০ পিস শীতবস্ত্র হাতে পাওয়া গেছে। যা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইতঃমধ্যেই বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন, হাতে পাওয়া ১ হাজার ৫৫৮টি শীতবস্ত্র চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমাদের আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বড়গাংনী পশ্চিমপাড়ার মৃত খোকা মোল্লার ছেলে পুটে মোল্লাসহ বেশ ক’জন বাড়ির পাশের রাস্তার ধারে ইটদিয়ে তৈরি করা চুলায় আগুন ধরিয়ে তাপাচ্ছিলেন। এরই এক পর্যায়ে পুটে মোল্লার পরনের পোশাকে আগুন ধরে যায়। আগুনে তার শরীরের এক পাশ ঝলসে গেছে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। তবে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি তীব্রযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। এছাড়া আলমডাঙ্গা ডাউকি গ্রামের আব্দুস সাত্তারের দেড় বছর বয়সী ছেলে সিয়াম নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। কয়েকদিন আগে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা উন্নতি হলে তাকে নেয়া হয় তার নানাবাড়ি বেলগাছি। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাকে আবারও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ১টায় সে মারা যায়। নিউমোনিয়াসহ সে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়াতেও ভুগছিলো বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। রাতে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকলেও সকালে কিছুটা পরিষ্কার হলেও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গতকাল দুপুরে সূর্য দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশার ঘনত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে গতকালও চুয়াডাঙ্গার নতুন পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। লেপ বানানোরও যেনো নতুন করে ধুম পড়েছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গত দু’দিন ধরে জীবননগরে তীব্র শীত অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল বুধবারও সূর্যের দেখা মেলেনি। সারাদিনই কুয়াশায় আচ্ছাদিত ছিলো এ উপজেলা। কনকনে শীতে শিশু, বাচ্চা ও বৃদ্ধাসহ ছিন্নমূল মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে হাটের দিন থাকলেও বাজার জমে ওঠেনি। সাপ্তাহিক বাজার জমে না উঠলেও গরম পুরাতন ও নতুন কাপড় কিনতে গার্মেন্টস ও ফুটপাতের দোকানে ক্রেতাদের ছিলো উপচেপড়া ভিড়।
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। হাঁচি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। অপর দিকে শীতের কারণে সারাদিনই গরম পোশাক পরে মানুষজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর জনবহুল শহর অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়ে। তীব্র এ শীতের মধ্যে অসহায় হয়ে পড়েছে গরীব ও হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ। তারা খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছে, গত ৩ দিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শৈত্য প্রবাহে থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। খেটে খাওয়া মানুষ কাজ কর্মে না যেয়ে খড়-কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নির্বারণ করছে। অফিস-আদালতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলো শীতবস্ত্রসহ খাদ্যের ব্যাপক কষ্ট করছে। এলাকায় তেমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি। গতকাল বুধবার সকালে মহেশপুর উপজেলা পিআইও অফিস থেকে ইউনিয়ন প্রতি চেয়ারম্যানদের কাছে ১শ’ করে কম্বল হস্তান্তর করা হয়েছে। মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তালহা বলেন, শৈত্য প্রবাহ চলতে থাকলে বোরো বীজ তলার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার খবরে জানা যায়, এ শৈত্য প্রবাহ আরও দু’একদিন চলতে পারে। এলাকার সচেতন মহল শীতবস্ত্র বিতরণের আবেদন জানিয়েছেন।