আমনেও স্বস্তি এলো না : চাল কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: সবাই তাকিয়ে ছিলেন আমনের দিকে। ধারণা ছিলো আমন উঠলেই ধান-চালের দাম কমবে। কিন্তু না, আমন ওঠার পরও দাম কমেনি। বরং বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চাল কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার আমন চাল সংগ্রহে গত বছরের তুলনায় পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৩৯ টাকা করেছে। তাই ব্যবসায়ীরাও চালের দাম বাড়িয়েছে। এতে আমন মৌসুমেও ভোক্তাদের উচ্চ মূল্যে চাল কিনতে হচ্ছে। এদিকে খোলাবাজারে সরকারের চাল বিক্রি অভিযান বন্ধ থাকার সুযোগও নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সব মিলে নিন্ম আয়ের মানুষ নিদারুণ কষ্টের মধ্যে রয়েছে।

জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, ‘এখন আমনের মরসুম। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা ছিলো দাম কমবে। কিন্তু দাম কমার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। কারণ কৃষকের ন্যায্যমূল্য দেয়ার জন্য সরকার আমন চাল সংগ্রহে গত বছরের তুলনায় ৫ টাকা বাড়িয়ে ৩৯ টাকা ধার্য করেছে। এটাকে সাধুবাদ জানাতে হয়। কিন্তু এই বাড়তি দামে চাল সংগ্রহের ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা মনে করছেন- সরকার যখন ৩৯ টাকায় চাল কিনছেন এতে মোকাম ও পাইকারি বাজারে চালের দাম একটু বেশি হওয়া উচিত। আর এই ধারাবাহিকতায় খুচরা বাজারেও চালের দাম বেড়েছে, যা আমন মরসুমে চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে আমি আশা করি, এই দাম বৃদ্ধি কিছুদিনের মধ্যে পরিবর্তন হবে।’

চাল মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার বেশি দামে আমন চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বড় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা সব ধরনের চালে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির পাইকারি চাল বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন,‘বড় চাল ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে স্বর্ণা চাল বিক্রি করেছি কেজিপ্রতি ৩৯ টাকা তা এ সপ্তাহে ৪১ থেকে ৪২ টাকা বিক্রি করছি। এছাড়া মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, যা সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা।’ দাম বৃদ্ধির চিত্র সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার দরের মূল্য তালিকায় দেখা গেছে। সেখানে সরু চালের দাম দেয়া আছে ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৫৮ থেকে ৬৬ টাকা। আর মোটা চালের দাম দেয়া আছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে দাম ছিলো ৪২ থেকে ৪৬ টাকা।

জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি মজুদ এবং কৃষকের গোলা মিলিয়ে বর্তমানে দেশে কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টন চাল রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সরকারি গুদামে বর্তমানে মজুদ ৪ লাখ ৬০ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ টন। আর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে গত নভেম্বরে দেশে ৭০ লাখ টন চালের সামগ্রিক মজুদ ছিলো। আর প্রতি মাসে দেশে চাল খাওয়ার পরিমাণ ২২ লাখ টন। সেক্ষেত্রে নতুন করে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, এবারের মরসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা দেড় কোটি টন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ কাটা হয়েছে। অর্থাৎ আমন থেকে ইতোমধ্যে ৪৫ লাখ টন চাল কৃষকের গোলা ও ব্যবসায়ীদের গুদামে এসেছে। আর এখান থেকে সরকার মাত্র তিন লাখ টন সংগ্রহ করতে পাঁচ হাজার চালকলমালিকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। সেক্ষেত্রেও দেখা যায়- আগের মজুদ, আমনের চাল ও আমদানি মিলিয়ে হিসাব করলে দেশে চালের কোনো সঙ্কট থাকার কথা নয়। চলতি বছরের জুন থেকে সারাদেশে ধান-চালের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। এতে লাগামহীনভাবে মূল্যবৃদ্ধি পায়। তাই চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু ওই কর্যক্রম এখন তা বন্ধ রয়েছে। খাদ্য অধিদফতর থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ১৫ ডিসেম্বর থেকে এ কর্মসূচি গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে করে এরইমধ্যে খাদ্যপণ্যের বাজারে নতুন করে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। যার সরাসরি শিকার হচ্ছেন নিন্ম আয়ের মানুষ।

এ বিষয়ে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের মতে, নিম্নবিত্ত মানুষের আয়ের একটা বড় অংশ চাল কিনতে ব্যয় হয়ে যায়। কোনো কোনো পরিবারের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ চাল কেনার পেছনে ব্যয় হয়। চাল কিনতে অতিরিক্ত এই ব্যয়ের প্রভাব অন্যান্য ব্যয়ের ওপর পড়ছে। এতে করে সামাজিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ার আশঙ্কার রয়েছে। তাই চালের সর্বনিন্ম দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকার মধ্যে আনতে হবে।