জুনে খুলবে ৫৩৪টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

স্টাফ রিপোর্টার: জেলা ও উপজেলায় নির্মিত ৫৩৪টি ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বার আসছে বছরের জুনের মধ্যেই খুলে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে ৩২১টি ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব কমপ্লেক্স নির্মাণে এ পর্যন্ত ৮৪৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২ হাজার ৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রকৃত সুবিধাভোগীর কাছে এসব বাসস্থান হস্তান্তর করা হবে। এরই মধ্যে ২ হাজার ৬৫১টি বাসস্থানের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। উল্লিখিত প্রকল্পের বাইরে ঢাকার মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধা পল্লী স্থাপন, বধ্যভূমি সংরক্ষণসহ নতুন আরও ১১টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরে হাতে নেয়া হয়েছে। অবশ্য তা এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বাস্তবায়নাধীন তিন ধরনের প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। এ বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ চাওয়া হলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়নকৃত প্রকল্পের অগ্রগতি ও ধীরগতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনায় সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং ভূমিহীন-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের আর্থিক ব্যয়ের অগ্রগতি হচ্ছে ৭৯ শতাংশ এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের আর্থিক ব্যয়ের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। এছাড়া ভূমিহীন-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আর্থিক ব্যয়ের অগ্রগতি হচ্ছে ৪১ শতাংশ।

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব অপরূপ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তিনটি প্রকল্পের অনুকূলে ৩৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৮২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। পাশাপাশি এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন ১১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
সব জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মইনুল হক আনছারী রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘আগামী জুনের আগে ৬৪টি জেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শেষ করা যাবে। প্রতিটি কমপ্লেক্সের নিচতলা মার্কেট ও দোকান, দ্বিতীয় তলা কমিউনিটি সেন্টার এবং তৃতীয় তলায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিস থাকবে। কমপ্লেক্স থেকে অর্জিত অর্থ ব্যয়ের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

আগামী জুনের মধ্যে ৬৪টি জেলায় একটি করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৫১টি কমপ্লেক্সের। আরও ৯টির নির্মাণ কাজ চলছে। বাকি ৪টি কমপ্লেক্স ঢাকা, ভোলা, নওগাঁ ও বান্দরবানে নির্মাণ করা হবে। জেলাগুলোয় জমি পাওয়াসাপেক্ষে কাজ শুরু করবে কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় ১৫২ কোটি টাকা ধরা হলেও এ পর্যন্ত ১২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

ভোলা জেলায় কমপ্লেক্স নির্মাণে জমি বরাদ্দের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নওগাঁ জেলায় জমি বরাদ্দের বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মতামত দিয়েছে। খুব শিগগির সেখানে কাজ শুরু হবে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স : ৪৭০টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বার আগামী জুনের মধ্যে খুলে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে ২৫৯টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজ চলমান আছে ৬২টির। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাতটি উপজেলায় অধিগ্রহণ সম্পত্তি পাওয়া নিয়ে সৃষ্টি জটিলতার কারণে সেখানে উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ২৫টি ভবন নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে সার্ভে ডিজাইন ও প্রাক্কলন শেষ হয়েছে। নির্মাণের জন্য ২২টি ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

দেশব্যাপী ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান প্রকল্পের আওতায় ৪৮৪টি উপজেলায় মোট ২ হাজার ৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর পর্যন্ত এ প্রকল্পে টাকা খরচ হয়েছে প্রায় ২২১ কোটি টাকা। এ অর্থ ব্যয়ে ২ হাজার ৬৫১টি বাসস্থান নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজ চলমান আছে আরও ৫২টির। পাশাপাশি ১১৯টি বাসস্থান নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২৬টি বাসস্থান নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি।
জানা গেছে, এসব বাসস্থান বরাদ্দের জন্য প্রকৃত ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করতে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি ৪৬৭টি উপজেলা থেকে যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৪৭ জন প্রকৃত সুবিধাভোগীকে শনাক্ত করেছে। এসব সুবিধাভোগীর বাসস্থান বরাদ্দের জন্য কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ১০৪টি বরাদ্দপত্র জারির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পর্যায়ক্রমে পরবর্তী বরাদ্দপত্রও জারি করা হবে। আগামী জুনের মধ্যেই এ কাজ শেষ করা হবে।

চলতি অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১১টি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। তবে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ, যুদ্ধে শহীদদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে জাদুঘর নির্মাণ, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ জাগ্রতকরণ, বধ্যভূমি সংরক্ষণ, মুক্তিযোদ্ধা পল্লী এবং ভবন নির্মাণ। জানা গেছে, অনুমোদিত এসব প্রকল্পের জন্য মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।