স্টাফ রিপোর্টার: নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্ধিত দামে বিদ্যুত বিল আদায় করছে বিদ্যুত বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলো। এর মাধ্যমে একদিকে তারা কর্তৃত্ববহির্ভূত বিল আদায় করছে অন্যদিকে গ্রাহকদের পকেট থেকে যাচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বিষয়টিকে অন্যায্য ও বেআইনি চর্চা বলে মনে করছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে জড়িতরা। বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্যহার কার্যকর হয়েছে চলতি ডিসেম্বর থেকে। গত ২৩ নভেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিল মাস ডিসেম্বর থেকে নতুন মূল্যহার কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। অর্থাৎ গ্রাহকরা (প্রিপেইড ছাড়া) ডিসেম্বরে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল নতুন মূল্যহার অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে পরিশোধ করবে। কিন্তু বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো নভেম্বর মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিলেই বর্ধিত মূল্য আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন একাধিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গ্রাহকদের নভেম্বর মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল বর্ধিত মূল্যহার অনুযায়ী তৈরি ও সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা ডিসেম্বর মাসেই বাড়তি মূল্যের বিল পরিশোধ করবে। বিইআরসির এক কর্মকর্তা জানান, মিটার রিডিং ও বিলিং সাইকেলের (সময়চক্রে) কারণে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের নভেম্বর মাসের বিল বর্ধিত মূল্যহারে তৈরি ও সরবরাহ করছে। ঢাকায় বিদ্যুত সরবরাহকারী ডিপিডিসি এবং ডেসকোও এ মাসে বর্ধিত দামে বিল তৈরি করছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও তড়িত প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিইআরসি’র ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরের ১ তারিখের আগে কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে বর্ধিত বিল আদায় করা যাবে না। কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে যদি সেটা করা হয় তবে তা হবে আইনের পরিপন্থী। বিইআরসি’র আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি হতেই পারে না।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসি এবং বিতরণকারী সংস্থাগুলো বলছে, একটি সংস্থার সব গ্রাহকদের মিটার রিডিং ও বিলিং প্রক্রিয়া এক দিনে সম্পন্ন করা যায় না। একটি মিটারের দুইটি রিডিংয়ের অন্তবর্তীকালীন ৩০ দিন নিয়ে বিল মাস নির্ধারিত হয়। গ্রাহকভেদে এ বিলমাস পঞ্জিকার যেকোনো তারিখে শুরু এবং শেষ হতে পারে। যেমন, মিটার রিডার যদি কোনো মিটারের রিডিং ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে গ্রহণ করে তবে আগের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে গৃহীত সর্বশেষ রিডিংয়ের পরবর্তী সময় থেকে ওই ২০ তারিখ পর্যন্ত ব্যবহৃত ইউনিট নিয়ে বিল নির্ধারিত হয়।
ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহিদ সারওয়ার বলেন, রিডিংয়ে যে মাসের দিন বেশি (১৫’র অধিক) সেই মাসে কার্যকর হওয়া বা থাকা মূল্যহার অনুযায়ী বিল তৈরি করা হয়। বিল তৈরির সফটওয়্যারগুলোও এ নিয়মে তৈরি করা হয়েছে। বিলিং সাইকেলের সুবিধার্থে নতুন মূল্যহার অনুযায়ী বিল করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিল তৈরির সফটওয়্যারে নতুন মূল্যহার অনুযায়ী বিল তৈরি করা এবং বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ বিল মাস ডিসেম্বরের মাত্র ৯ দিন পেরিয়েছে। তাই চলতি ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত গৃহীত বিলে নতুন মূল্যহার অনুযায়ী বিল তৈরির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিইআরসি’র সঙ্গে কথা বলে আমরা বিষয়টি পরিস্কার হয়েছি।
কিন্তু আরইবিরই উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যখন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়েছিলো তখনও বর্ধিত মূল্যহার সেপ্টেম্বরে ব্যবহৃত বিদ্যুত নিয়েই তৈরি হয়। আগস্টের বিল বর্ধিত মূল্যে নেয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসি’র সদস্য (বিদ্যুত) মিজানুর রহমান বলেন, নতুন মূল্যহার কার্যকর হবে বিলমাস ডিসেম্বর থেকে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের আগে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল আগের মূল্যহারে (প্রতি ইউনিটের গড় দাম সাড়ে ৬ টাকা) এবং ডিসেম্বর বা তারপরের ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম নতুন মূল্যহারে (প্রতি ইউনিটের গড় দাম ৬ টাকা ৮৫ পয়সা) পরিশোধ করতে হবে।