ঋণ বিতরণে স্থবিরতার আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার: ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো দায় নেই। সব দায় এমডি, এএমডি, ডিএমডি এবং শাখা ম্যানেজারের। ব্যাংকিং খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এমন দোষারোপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন এমডিরা। তারা বলেন, পর্ষদ ছাড়া বড় কোনো ঋণ অনুমোদন দেয়া হয় না। এভাবে দোষারোপ করলে নতুন করে ঋণ বিতরণে কেউ সাহস পাবেন না। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণে এক ধরনের স্থবিরতার আশঙ্কা দেখা দেবে।

প্রসঙ্গত, ৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দু’দক) জিজ্ঞাসাবাদে বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দায় অস্বীকার করেন সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাব তৈরি ও অর্থলোপাটের সব দোষ চাপিয়েছেন তিনি সাবেক এমডি কাজি ফখরুল ইসলামের ওপর। তিনি বলেন, এমডির উপস্থাপনা অনুযায়ী ওই সময়ে ঋণ প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার কোনো দায় নেই। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঋণ যাচাই কমিটির আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বাচ্চু অনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে ঋণ অনুমোদন করতেন। যদিও দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু আগের অবস্থান থেকে কিছুটা পিছু হটে আসেন। পর্ষদকে জড়িয়ে তিনি দায় স্বীকার করে বলেন, ‘আমি একা নয়, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই ঋণ বিতরণ হয়েছে। পর্ষদ যেভাবে চেয়েছে আমি সেভাবে কাজ করেছি।’ সূত্রে জানা গেছে, এমডিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। বোর্ড তাদের ওপর খবরদারি করছে। বিভিন্ন সভায় বিষয়টি একাধিকবার আলোচিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গত মাসের শেষদিকে একান্ত আলাপের সময় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীকে বলেন, মেঘনা ব্যাংকের এমডিকে অনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া একটি ব্যাংকের তিন বছরে তিনজন এমডি চাকরি হারিয়েছেন। একজন এমডি চেয়ারম্যানের অপমান সইতে না পেরে পদ ছেড়ে চলে যান।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ‘সব দোষ এমডির’ শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেন, ঢালাওভাবে এমডিদের দোষারোপ করা তার ঠিক হয়নি। সুনির্দিষ্টভাবে কারও দোষ প্রমাণিত হলে তাকে বলা যেতে পারে। এভাবে গণহারে দোষারোপ করলে ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ কোনো ব্যাংকের এমডি এ দায় নেবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসিক ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এমডির একার পক্ষে ঋণ দেয়া সম্ভব নয়। বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে ঋণ দিতে হয়। উনার (শেখ আবদুল হাই বাচ্চু) বক্তব্যে এমডিরা ভয়ে আছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে চাকরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পর্ষদের নির্দেশে কাজ করে জেলে যেতে হয় ব্যাংকারদের। এতে ঋণ বিতরণে স্থবিরতা সৃষ্টি হবে। কারণ কেউ ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।