মেহেরপুরের গাংনী ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন
গাংনী প্রতিনিধি: বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আমরা আমদের যৌবন-তারুণ্য দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য কাজে লাগিয়েছি। কিন্তু আমাদের দুঃখ লাগে, আজকের তরুণ যখন দেখি মাদকাসক্ত, আমাদের কষ্ট হয়। যখন দেখি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন তাদেরকে তাড়িত করছে। দেশ মাতৃকার উন্নয়নের কথা তাদের মাথায় আসছে না, তখন আমাদের ভয় হয়। তাদের প্রতি আমার আহ্বান, আমরা আর বেশিদিন নেই। তারাই সামনের দিনে দেশকে এগিয়ে নেবে। এই ইকোপার্ক আমাদের জন্য হয়নি। তরুণদের জন্য হয়েছে। তারাই আমাদের দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাংনী ভাটপাড়া নীলকুঠিতে নির্মিতব্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইকো পার্কে আয়োজিত সূধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। সমাবেশের আগে পার্কস্থলে নামফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন মন্ত্রী। পার্ক চত্বরে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সূধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ। বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন জেলার পর্যটন খাতের বহুবিধ উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ডিসি ইকোপার্কের সীমানা প্রাচীর জেলা পরিষদ থেকে নির্মাণ করবে বলে আশা করছি। পার্কের পর্যটন মোটেলসহ অন্যান্য কাজ এক বছরের মধ্যেই আরও দৃশ্যমান হবে। পর্যটন মোটেল স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য দুই মাসের মধ্যেই সংশ্লিষ্টরা পরিদর্শন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে গাংনীর উন্নয়নের ২৫ দফা বাস্তবায়নের বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবেন বলে জানান। অপরদিকে, মেহেরপুর জেলার দুটি আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে ইকোপার্কের উন্নয়নের সহায়তা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেন মন্ত্রী। মুজিবনগর কমপ্লেক্স ও আমঝুপি নীলকুঠিতে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের ফিরিস্তি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। আজ তার বাস্তব সুফল সবাই ভোগ করছেন। অপরদিকে তিনি ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন দেশবাসীকে দেখিয়েছেন তার সফল বাস্তবায়নও জনগণের হাতে। যে উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা এগিয়ে চলেছি, সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়িয়ে থাকবে। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশই হবে। উন্নয়নের এই ধারাবহিকতা অব্যহত রাখতে আগামি নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিজয়ী করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান তিনি। সারা দেশের মানুষ উন্নত ও মুক্ত জীবন আশা করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, উন্নত ও মুক্ত জীবনের জন্য চাই বৈষম্যহীন, শোষণহীন, সমতাভিত্তিক সমাজ। এজন্য তরুণদেরকে দেশপ্রেমে জীবন গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগ তুলে রাশেদ খান মেনন বলেন, বেগম জিয়া আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে ফিরে আসার সময় তার কর্মীরা গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে। ২০১৪ সালেও তারা মানুষ ও গাড়ি পুড়িয়ে আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো। আমরা কঠোর হস্তে দমন করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি এবং জঙ্গিবাদও মোকাবেলা করা হচ্ছে। এদেশে যাতে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা আর শেকড় গাড়তে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ ফরিদ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নুর আহমদ বকুল, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক কমরেড আব্দুল মাবুদ ও সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক। স্বাগত বক্তব্যে নীলকুঠির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে পার্কের উন্নয়নে গাংনীবাসীর দাবি উত্থাপন করেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল। বক্তারা ভাটপাড়া পার্কের সার্বিক উন্নয়নের দিক তুলে ধরেন। জেলার দু’জন এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পার্কের উন্নয়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
এদিকে, বেলা সাড়ে এগারটার দিকে সড়কপথে মন্ত্রী গাংনী ওয়ার্কার্স পার্টি কার্যালয়ে পৌঁছুলে নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। দলীয় কার্যালয়ে কিছু সময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করেন। দুপুর পৌনে বারোটার দিকে গাড়িবহরে ভাটপাড়ায় পৌঁছান মন্ত্রী। সেখানে পার্কের নাম ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় দো’আ মোনাজাত ও শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ানো হয়। এদিকে মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গাংনী থেকে ভাটপাড়া পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। মন্ত্রীকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করেন শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সকলেই। সমাবেশস্থলে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মী, সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। সমাবেশের পরে একই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশ বরেণ্য জনপ্রিয় শিল্পি নকুল কুমার বিশ্বাস। একাধারে তিনি তিন ঘন্টা গান পরিবেশন করে মুগ্ধ করেন দর্শকদের।