সাইদুর রহমান: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার টেইপুর নতুনপাড়ার আবু বক্করের ছেলে দরিদ্র আশাবুল হক অক্লান্ত পরিশ্রমী। তিনি একসময় বাঁশের মুথা তুলে বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটাতেন। অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েও তিলতিল করে টাকা জমান। সেই টাকা দিয়ে দুটি ছোট্ট ভেড়ার বাচ্চা কিনে পুষতে শুরু করেন। একে একে তার অসংখ্য ভেড়া হয়। এখন তিনি ভেড়ার খামারের মালিক। তিনি এখন স্বাবলম্বী সফল ভেড়া খামারি। এবার তিনি স্বপ্ন দেখছেন গরু খামারের।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের টেইপুর গ্রামের আবুবক্করের ছেলে আশাবুল হক সংসারের অভাবের তাড়নায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে সারাদিন বাঁশের মুথা তুলে বিক্রি করতেন। সন্ধ্যার পর ঘোরাঘুরি না করে চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে চালাতেন সংসার। সংসারে অভাব থাকা সত্বেও তার ছেলে ইয়াসিন হোসেন সংসার খরচ থেকে টাকা বাচিয়ে ২০০৮ সালের শেষের দিকে একটি ভেড়ার বাচ্চা কেনেন। কয়েক মাস পোষার পরে এক হাজার টাকায় সেটি বিক্রি করে দেন। ক্রেতা চারুলিয়া গ্রামের ডাক্তার শরিফুল তাকে ভালো জাতের ভেড়া পালনের পরামর্শ দেন। তার কথা মতো আবারও কিছু টাকা গুছিয়ে শরিফুলের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাড়ল ভেড়ার বাচ্চা কেনেন ইয়াসিন হোসেন। যখন আস্তে আস্তে ভেড়া বাড়তে থাকে তখন খামার তৈরির লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৯ সালের দিকে এনজিও হতে ৩০ হাজার টাকা লোন তুলে তা দিয়ে ১০টি গাড়ল ভেড়া কেনেন। পরের মাসে ১৫টি বাচ্চা ভেড়ার জন্ম হয়। এভাবেই দিন দিন বাড়তে থাকে ভেড়া। তৈরি করেন ভেড়ার খামার। বর্তমানে তার খামারে দু’শতাধিক ভেড়া আছে যার মূল্য আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে খামার মালিক আশাবুল হক বলেন ‘আমার সংসারের অভাব দূর হয়েছে। আজ আমি স্বাবলম্বী। সেই সাথে এলাকার অনেকেই আমার খামারে কাজ করছে। আমি হাজার প্রতিঘাতের মধ্যেও স্বপ্ন দেখেছি খামার তৈরি করবো তা করতে পেরেছি।’ তার ভবিষ্যত ইচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘আমার ইচ্ছে ভেড়া খামারের সাথে সাথে গরুর ফার্ম করবার। সেই লক্ষ্যে আমি গরু রাখার জন্য শেড তৈরি করেছি।
টেনপুর গ্রামের মুকুল সর্দ্দারের ছেলে ইমান আলী, মছেদ আলীর ছেলে কুড়–ন আলী, আমারত ম-লের ছেলে ফিজুল হোসেন ও আলতাফ ম-লের ছেলে আরশাদ ম-ল বলেন, অশিক্ষিত হতদরিদ্র আশাবুলের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তার এই উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকেরা সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে গাড়ল ভেড়াসহ গরুর খামার করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি হতে পারে। গত শনিবার ওই খামার দেখতে টেইপুরে যান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ কয়েকজন সাংবাদিক। এদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাবেক চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি খুস্তার জামিল, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক, ওসি তদন্ত মোহাম্মদ আলী, জেলা পরিষদের সদস্য কাজল রেখা, আলুকদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তাউর রহমান মুকুল, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, একটিবাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ফিল্ড অফিসার ফরজ আলী, হাফিজুর রহমান, জৈব সার প্রকল্পের কর্মকর্তা আবু সাদাত রিমু, সাংবাদিক রাজীব হাসান কচি, রফিক রহমান, আহাদ আলী মোল্লা, বিপুল আশরাফ, আব্দুস সালাম ও আলম আশরাফ।