প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠিত : চক্ষু হাসপাতাল উন্নয়নে নানা কর্মসূচি ঘোষণা

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের নির্বাচনে অ্যাড. সেলিম-ফজলু পরিষদের

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে অ্যাড. সেলিম উদ্দিন খান-ফজলুর রহমান পরিষদের প্যানেল পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রেডক্রিসেন্ট ইউনিট কার্যালয়ে এ পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্যানেলের সাত সদস্যকে পরিচয় এবং চক্ষু হাসপাতাল উন্নয়নে অতীতের ভূমিকা ও আগামীর পরিকল্পনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফজলুর রহমান। এ সময় ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাড. সেলিম উদ্দিন খান (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত), সদস্য প্রার্থী অ্যাড. মোল্লা আব্দুল রশিদ, শহীদুল ইসলাম শাহান, অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম ও হাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফজলুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, চুয়াডাঙ্গা ইউনিট তথা চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম আপনাদের অবগতির জন্য পেশ করছি। আমি ১৯৯১ সালে সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করি। গ্রহণকালে একতলা একটি পরিত্যাক্ত ভবন, একটি হার্ডবোর্ডের টেবিল, ৮টি কাঠের চেয়ার ও জনতা ব্যাংকে স্থিতি ৬ টাকা ৩৭ পয়সা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করি। অতিব দুঃখের বিষয় দায়িত্ব গ্রহণের পর লক্ষ্য করি আকাশচুম্বী দায় দেনা। পিয়ন ও আয়ার বেতন বাকী, জমির খাজনা, পৌর কর ও পানির বিল যা হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পর থেকে বকেয়া ছিলো। এ সকল বিল পরবর্তীতে পরিশোধ করা হয়েছে। একটি পচা গর্তের মধ্য থেকে এই হাসপাতালটিকে উন্নয়নের শিখরে তুলে এনেছি। এ সকল কাজে বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে যাঁরা এসেছেন তাঁরা আমাকে সার্বিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে ১০টি বেডসহ ৩০-৩৫ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে এবং অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ হয়েছে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকা। সদ্য সীমানা প্রাচীর প্লাস্টার, গেট নির্মাণ, ভবনের ভিতরের অংশে উন্নতমানের তিনটি বাথরুম নির্মাণ, ওপর ও নীচতলায় সকল কক্ষে ডিসটেম্পার করণ, জানালা দরজা রংকরা, ১ম ও ২য় তলায় টাইলস স্থাপন, ২য় তলায় ফলস সিলিং নির্মাণ, ২য় তলায় থাই গ্লাস স্থাপন, ডাক্তারের কক্ষে একটি নতুন দেড় টনের এসি স্থাপন, জলছাদের চিপ ঢালাইয়ের অর্থ জেলা পরিষদ ও নিজেস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মহোদয় ৩ লাখ টাকা, আমেরিকা প্রবাসী হাজি আবুল কাশেম মন্ডল ২ লাখ টাকা, ঢাকা রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু ১ লাখ টাকা, অ্যাডভান্স কেমিক্যাল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল হক বিল্টু ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, আলফা টোবাকো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ.আর মালিক ১ লাখ টাকা, খুলনায় অবস্থানকারী পাট ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ৫০ হাজার টাকা, হাফিজুল আলম মালিক (মালিক টাওয়ার) ৫০ হাজার টাকা, ব্রাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহাবুব হোসেন, মহাখালি, ঢাকা ৫ লাখ টাকা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ৫০ হাজার টাকা, শহীদুল হক মোল্লা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোল্লা মেশিনারিজ থানা রোড চুয়াডাঙ্গা ৪০ হাজার টাকা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সালাউদ্দিন ও এনামুল হক লোটাস ঈদগাহ পাড়া চুয়াডাঙ্গা ২৫ হাজার টাকা, মাহমুদুর রহমান তরফদার শাওন দর্শনা ২০ হাজার টাকা, এম কে নূর এ সাহিদ রানা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ন্যাচারাল গ্রুপ, বনানী ঢাকা ২০ হাজার টাকা, হাজি সৈয়দ আসাদুজ্জামান ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফিদ পোল্ট্রি ফিড অ্যান্ড হ্যাচারি সিড়ি ঘরের এস এসের রেলিং নির্মাণের জন্য নগদ ২৫ হাজার টাকা ও অপারেশন থিয়েটারের জন্য ২টি এসি প্রদান করেন। এছাড়াও দুস্থ এতিম গরীব রোগীদের চোখের অপারেশনের জন্য একরামুল হক বিল্টু ৩ লাখ ২ হাজার টাকা, আকিজ গ্রুপ ১৪ লাখ টাকা, হাজি সৈয়দ আসাদুজ্জামান ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, অত্র হাসপাতালের কনসালটেন্টের সহধর্মিনী মিসেস শামীমা আক্তার তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল হতে গরীব রোগীর অপারেশন বাবদ ২ লাখ টাকা প্রদান করেছেন। এছাড়া কমিউনিটি আই ফাউন্ডেশনের স্বত্বাধিকারী ডা. এম বি আজম প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার ঔষধ গরীব রোগীদের মাঝে বিতরণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়কে ব্লাড ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব দিলে চেয়ারম্যান মহোদয় ভবন নির্মাণের অ্যাস্টিমেটসহ আবেদন করার পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক আমি ১৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার অ্যাস্টিমেটসহ আবেদন দাখিল করলে চেয়ারম্যান মহোদয় প্রাথমিকভাবে জেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল হতে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন । যা আগামী ৭ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান মহোদয় ব্লাড ব্যাংক ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মেচন করবেন। ব্লাড ব্যাংক ভবন নির্মিত হলে একটি উন্নতমানের ফ্রিজ ক্রয় করতে পারলেই সেভ ব্লাড ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি মেশিন বরাদ্দ পাওয়া যাবে। ওই মেশিনে ব্লাডে কোনো ক্ষতিকারক জীবাণু আছে কি না সনাক্ত করা এবং ব্লাড গ্রুপ পৃথক পৃথক করা যাবে। এতে করে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ব্লাড পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া কানাডার একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতালে সু-চিকিৎসার জন্য আরও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে আগ্রহী। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কানাডীয় প্রতিনিধি ফাহিম রিদওয়ানের সাথে আলোচনা করলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আগামী বছর আমাদের হাসপাতালটিকে তাঁদের প্রকল্পভূক্ত করবেন। এছাড়াও হাসপাতালের জন্য জরুরীভাবে একটি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিভিন্ন কোম্পানী, ব্যাংক ও দানশীল ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা চলছে। চক্ষু হাসপাতালের কাধের উপর ভর করে ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। তার কারণ আমি দুই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি থাকার কারণে এই হাসপাতালের প্রায় ১০ বছর যাবৎ বিনা ভাড়ায় ডায়বেটিকের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তারপর নামমাত্র ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখার সুযোগ সৃষ্টি করেছি। এছাড়াও এক টেবিলে এক চেয়ারে এক কাগজ-কলমে একজন পিয়ন দিয়ে একজন নাইট গার্ড দিয়ে দুইটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়েছে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে এবং সপ্তাহে দুইদিন অপারেশন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২হাজার ৫শ রোগীর অপারেশন করা হয়েছে। যার সফলতা ১০০%। আপনারা জানেন, চুয়াডাঙ্গায় পূর্বে চোখের কোনো ডাক্তার ছিলো না। বর্তমানে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন ডা. এম বি আজম, ডা. আব্দুল হালিম, অর্থোপ্যারামেডিকস ইউনুস আলীসহ সকলে নিজ নিজ দফতরে চক্ষু রোগীদের চিকিৎসাসহ অপারেশনের কাজ সম্পন্ন করেন থাকেন। গত বছরের বর্হিবিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৬ হাজার ৮শ ৭০ জন। অপারেশন রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩শ ৪০ জন। অথচ চলতি বছরে বর্হিবিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৭ হাজার ৫শ ৪০ জন। অপারেশন রোগীর সংখ্যা ৩শ ৭৫ জন। এ খাতে আয় হয়েছে ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ৭শ ৯৬ টাকা। এতোকিছুর পরও বর্তমানে ব্যাংক স্থিতি ৩৩ লাখ টাকা। চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট ইউনিট বাংলাদেশের রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রমের মধ্যে ৭ম-৮ম গ্রেডে আমাদের অবস্থান। অল্প সময়ের মধ্যে এক নম্বর স্থান দখল করে নেবো। আমাদের উন্নয়নে আপনারা শরীক হবেন সহযোগিতা করবেন পরামর্শ দেবেন ।
প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজাদ মালিতা ও সাধারণ সম্পাদক ফাইজার চৌধুরী, দৈনিক আকাশ খবর সম্পাদক অ্যাড. তছিরুল আলম মালিক ডিউক, আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক মানিক আকবর, শাহ আলম সনি, আব্দুল মজিদ জিল্লু, মিজানুল হক, রফিক রহমান, বিপুল আশরাফ, আতিয়ার রহমান, রিফাত রহমান, তানজির আহমেদ রনি, রুহুল আমিন রতন, আলমগীর কবির শিপলু ও মাবুদ সরকার উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সাংবাদিকরা চক্ষু হাসপাতাল ভবনের অপারেশন থিয়েটার, ওয়ার্ড রুম, ডাক্তারের চেম্বার ও হাসপাতালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন।