চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীর ১৬ লাখ টাকা কেড়ে নেয়ার অভিযোগে নড়ে চড়ে বসেছে ঝিনাইদহ পুলিশ

এসআইসহ দত্তনগর ফাঁড়ি পুলিশের ৪ জনকে ক্লোজ করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু

মহেশপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুরের দত্তনগর ফাঁড়ির এক এসআইসহ ৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহারের পর ক্লোজ করা হয়েছে। রুজু করা হয়েছে বিভাগীয় মামলা। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। চুয়াডাঙ্গার এক ব্যবসায়ীকে জীবননগরের সড়কের একটি বাস থেকে নামিয়ে তার নিকট থাকা ১৬ লাখ টাকা কেড়ে নেয়ার প্রেক্ষিতে এসব পদক্ষেপ নিয়েছে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার। ছিনিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে থেকে ৯ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ী ওয়াজির আলী ওতো টাকা নগদ বহনের হেতুও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ।

ক্লোজ চার পুলিশ সদস্য হলেন- মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাহফজুল হক, এএসআই নুরুন্নবী, কনস্টেবল হোসেন আলী ও সোহল রানা। ঘটনাটি ঘটেছে ২৬ নভেম্বর। ২৭ নভেম্বর পুলিশ ওই চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। শৈলকুপা সার্কেলের সিনিয়র এএসপি তারেক আল মেহেদী হাসানকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২৬ নভেম্বর রোববার সকালে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওয়াজির ১৬ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি কেনার জন্য জীবননগর আসছিলেন। পথে সন্তোষপুর নামক স্থানে পৌঁছুলে দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই নুরুন্নবী, কনস্টেবল সোহেল রানা ও হোসেন আলী মোটরসাইকেল চেকিং করার কথা বলে তাকে নামিয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এরপরে আটকে রেখে তার কাছে থাকা ১৬ লাখ টাকা কেড়ে নেয়া হয়। ওয়াজির আলী অনুনয়-বিনয় করে ১ লাখ টাকা ফেরত নেন। সে পুলিশ ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বাকি ১৫ লাখ টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। এতে করে খবর ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় দুইজন সাংবাদিক ঘটনাটি মহেশপুর থানাকে অবহিত করেন। এরপর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মহেশপুর থানার ওসি আহমেদ কবীর বলেন, ২৬ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে দত্তনগর ফাঁড়ির আইসি এসআই মাহফুজুল হক, এএসআই নুরুন্নবী, কনস্টেবল হোসেন আলী ও সোহেল রানা চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাহাজ্জেল আলীর ছেলে ওয়াজির আলীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা কেড়ে নেয় মর্মে অভিযোগ করা হয়। খবর পেয়ে একই উপজেলার স্বরূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, একই ইউনিয়নের মেম্বার হামিদুল ও পাশের জীবননগরের মেম্বার রবিউলের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি। সেইসঙ্গে দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির দুইজন কনস্টেবলকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। ওসি জানান, ১৬ লাখ টাকা কেড়ে নেয়ার খবরের সত্যতা বেরিয়ে আসে। বিষয়টি ফোনে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানকে জানানোর পরে ২৭ নভেম্বর জড়িত ৪ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে।
পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানায়, ঘটনাটি জানাজানি হলে গত সোমবার ২৬ নভেম্বরই দুপুরের দিকে তড়িঘড়ি করে মহেশপুর উপজেলার রূপালী ব্যাংক খালিশপুর শাখার ম্যানেজারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ওয়াজির আলীকে নগদ ৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন জড়িত ওই ৪ পুলিশ সদস্য। ওই টাকা মহেশপুর উপজেলার রূপালী ব্যাংক খালিশপুর শাখার একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়। বাকি ৭ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার জন্য ভিকটিমের কাছ থেকে সময় নেয়া হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান সিনিয়র এএসপি তারেক আল মেহেদী হাসান বলেন, (মঙ্গলবার) ঘটনা তদন্ত করতে জীবননগর যান এবং ভিকটিম ওয়াজির আলীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তদন্ত কাজ শেষ করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। ভিকটিম ১৬ লাখ টাকা কীভাবে পেলেন এবং তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।