কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনে বোরো ধানের আবাদ নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা কাটেনি

কর্মকর্তাদের তরফে চাওয়া হচ্ছে প্রকৃত চাষিদের তালিকা প্রণয়নে কমিটি : কৃষকদের দাবি ৬৫ শতাংশ বীজ
স্টাফ রিপোর্টার: বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনে বোরো ধান আবাদের চাষি তালিকাভুক্তকরণে সৃষ্ট জটিলতা কাটেনি। গতকাল কিছু কৃষক নিয়ে বৈঠকে বসলেও কর্মকর্তাদের শর্তপূরণ এবং চাষিদের ৬৫ শতাংশ ধানবীজ দাবির মুখে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে প্রকৃত ধান চাষিদের তালিকা দেয়ার জন্য কমিটি গঠনের আহ্বান জানানোর মধ্যদিয়েই গতকালের বৈঠকের ইতিটানা হয়। যদিও সন্ধ্যায় ১৩ জনের নাম লেখা চিরকুট সাংবাদিকের হাতে ধরিয়ে বলা হয় এরাই কমিটিভুক্ত চাষি।
বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনের চাষি তালিকাভুক্ত করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তি বড় চাষি সেজে কর্তাদের যোগসাজসে ইচ্ছেমতো বরাদ্দ নেয়ার পাশাপাশি তাদেরই আধিপত্যের কাছে এতোদিন হার মেনেছে প্রায় সকলে। প্রকৃত বহুচাষিকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ারও উদাহরণ রয়েছে। তবে কিছুদিন ধরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। আধিপত্যে ভাগিদারই শুধু বৃদ্ধি পায়নি, অভ্যন্তরের নানা অনিয়ম প্রকাশের শঙ্কায় কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নিয়ম জারিতেও সিদ্ধহস্ত হওয়ার মতো উক্তি আওড়াতে শুরু করেছেন। ফলে গত এক মাস ধরে বিএডিসি কন্ট্রাক্টগ্রোস চুয়াডাঙ্গা জোনে এবারের বোরো ধান আবাদের চাষি তালিকাভুক্তকরণসহ যাবতীয় কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। চাষি সেজে ভাগ নেয়ার নেতার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কারো কারো মধ্যে পেশিশক্তি প্রয়োগে পাঁয়তারাও শুরু করেছে। ফলে বোরো ধানের আবাদই চুয়াডাঙ্গা জোনে এবার হুমকির মুখে। গতপরশু কৃষকদের আহ্বান করা হলেও একদল যুবকের কৌশলী হানার প্রেক্ষিতে বৈঠক ভেস্তে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কিছু কৃষক নিয়ে বৈঠকে মিলিত হন বিএডিসি কন্ট্রাক্সগ্রোস চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম, উপপরিচালক (বীজ উৎপাদন) তাজুল ইসলাম ভুইয়া, সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আপতকালীন মজুদ) আব্দুর রহমান। বৈঠকে উপস্থিত কৃষকদের মধ্যে দুজন বক্তব্য রাখেন। এরা হলেন জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ও এনামুল হক লোটাস। বক্তব্যে বোরো ধানের পাতু দেয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়ে বলা হয়, কৃষকদের ২০ শতাংশ নয়, ৬৫ শতাংশ হারেই বীজ দিতে হবে। আজ-কালের মধ্যে বীজ দেয়া না হলে ধানের আবাদ করা সম্ভব হবে না। পক্ষান্তরে কর্মকর্তাদের তরফে বলা হয়, যেন তেনোভাবেই যাকে তাকে চাষি সাজিয়ে তালিকা দিয়ে হাতে গোনা কিছু ব্যক্তির কর্তৃত্ব মেনে নেয়া হবে না। প্রকৃত চাষিদেরই এবার তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রকৃত চাষির তালিকা দেয়ার জন্য গঠন করতে হবে কমিটি। এ বক্তব্যের মধ্যদিয়ে বৈঠক শেষ হলেও কবে কখন কীভাবে কমিটি গঠন করা হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। অথচ বোরো ধানের পাতু দেয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে সোহরাব হোসেন, সাইফুল হোসেন, স্বপন মালিতা, শাহিন বিশ্বাস, তোফাজ্জেল হোসেন, ফরিদ হোসেন, তুফান আলী, শান্তি, হারুন, মুকুল, সেলিম মল্লিক, আসামাউল হক ও লিটন আলীকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সূত্র বলেছে, এবার দেশের ১৪টি জোনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা কন্ট্রাক্টগ্রোস জোনে মোট ৫ হাজার ৮শ ১৭ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করার বরাদ্দ মিলেছে। বীজ স্বল্পতার কারণে কৃষকদের মধ্যে চাহিদার ২০ শতাংশ বরাদ্দ করা হবে। তবে কৃষকদের দাবি ৬৫ শতাংশ। তাছাড়া কৃষক সেজে বা বর্গাচাষি সেজে অনেকেই হাম্বি তাম্বি করে তালিকাভুক্ত হওয়া এবং করানোর জোর তৎপরতায় পরিস্থিতি বেশামাল হয়ে পড়েছে। ফলে কর্মকর্তাদের তরফে প্রকৃত চাষিদেরকেই তালিকাভুক্ত করে বোরো ধানের আবাদ করিয়ে চাষিদের নিকট থেকে বীজ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম চলে আসছে কৌশলে। হাতেগোনা কিছু ব্যক্তির আধিপত্যে ছেদ পড়ায় অনিয়মের অনেক কিছুই অল্প অল্প করে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।