চুয়াডাঙ্গায় জেএসসি-জেডিসি অনুপস্থিত ৮শ ছাত্রীর ডাটাবেজ তৈরী হচ্ছে

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৪ বালিকা বিদ্যালয়কে নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার : চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চারটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। জেএসসি- জেডিসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৮শ ছাত্রীর ডাটাবেজ তৈরী করা হচ্ছে। তাদের গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সকল ছাত্রীদের অভিভাবক ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। গতকাল রোববার দুপুরে ‘বাল্যবিবাহ রোধকল্পে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি গঠন বিষয়ক’ আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এসব মন্তব্য করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুর রাজ্জাক, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম রেজা, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হাসান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত মান্নান, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম, ব্র্যাক জেলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোজাম্মেল হক, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক, জেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, প্রশাসন এখন হার্ডলাইনে আছে। হাইকোর্ট থেকে আদেশ আছে বাল্যবিয়ে হলে সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা দায়ী থাকবেন। ১৮ বছরের নীচে কোনো মেয়ে এবং ২১ বছরের নীচে কোনো ছেলে বিয়ে করলেই তা বাল্যবিয়ে। প্রতিটি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে ২টি করে সিসিটিভি থাকতে হবে। সিসিটিভি বড় ধরণের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এটা তাদের নিরাপত্তায় কাজে লাগবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মেয়েদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। মেয়েরা এখন আর বোঝা নয়, বিষয়টি অভিভাবকদের বুঝতে হবে। ছেলেরা মাদকাসক্ত কিংবা ছিনতাইকারি হতে পারে, তাই ছেলেরা এখন বোঝা। ১৮ বছরের নীচে ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। একই বয়সে ছেলেদের বিয়ের হার ৫ শতাংশ। বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য টোল ফ্রি ১০৯ মোবাইলে ফোন করে তথ্য দিতে পারবেন। বিশ্বের ৪০ লাখ মেয়ের বাল্যবিয়ে হচ্ছে বছরে। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান ৪র্থ শীর্ষে এবং আত্মহত্যার ক্ষেত্রে ২য় শীর্ষে অবস্থান চুয়াডাঙ্গা। ভালাইপুরে একটি বিয়ে ঠেকাতে পারিনি। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ওই বাড়িতে কেউ নেই। মোহাম্মদ আলী নামে বিয়ে পড়ানো অভিযোগে বর্তমানে জেলা করাগারে রয়েছে। জেলার সদর উপজেলার মোমিনপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আলমডাঙ্গার জামজামি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে পদক্ষেপ গ্রহণ উত্তরণের চেষ্টা করা হবে। হাইকোর্টের আদেশ জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দেয়া হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান বলেন, জেএসসি নয় এবার দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের একজন পিএসসির ছাত্রীর বিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইমামদের নিয়ে সমাবেশ করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। যে সকল ইমাম বিয়ে পড়ানোর কাজে লিপ্ত থাকবে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, একটি আনন্দ স্কুলের শিমুর বিয়ে হয়ে গেছে। জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। জেলা কাজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসলি হক বলেন, জেলার মধ্যে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে বেশি বাল্যবিয়ে হচ্ছে। গোপনে বিয়ে পড়াচ্ছে। পরে রেজিস্ট্রি হচ্ছে। অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে যথাযথ মনিটরিং হয় না। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোজাম্মেল হক বলেন, এখন বাল্যবিয়ে পড়াচ্ছেন মসজিদের ইমামরা। অভিভাবকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।