সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরতের নির্দেশ দিলেন ইউএনও
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) উত্তরপত্র (উত্তর লেখা খাতা) ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খাতায় লিখতে গিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছেন ছাত্রছাত্রীরা। তবে অনিয়মকারীদের শেষ রক্ষা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। সরকার নির্ধারিত দরের কমে খাতা ক্রয় করে পকেটস্থ করা টাকাগুলো সরকারি কোষাগারে ফেরতের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও।
জানা গেছে, গত রোববার থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক সমাপনী ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় এ উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করছে। প্রথমদিন থেকেই কোমলমতি শিশুরা খাতায় উত্তর লিখতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন। খাতার মান নিয়ে ছাত্রছাত্রী, কেন্দ্র পরিদর্শক শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
গতকাল সোমবার গাংনী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা জানা যায়। কয়েকজন ছাত্রছাত্রী জানায়, পরীক্ষার খাতার ওপরের পিঠে লিখলে নীচের দিকে দাগ পড়ে যাচ্ছে। ওই পাতায় ঠিকমতো লিখতে পারছি না। পাতলা কাগজ তাই অনেক ক্ষেত্রে ছিড়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও জানালেন একই অভিযোগ।
এদিকে বিষয়টি গাংনী প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গোচরে আনলে তিনি তড়িত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ইউএনও’র সামনে উপস্থিত হয়ে খাতা ক্রয়ের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রদান করেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক উদ্দীন। শিক্ষা অফিসার সরকারি ক্রয় নীতিমালা উপেক্ষা করে কোনো কোটেশন দরপত্র ছাড়াই কুষ্টিয়ার একটি প্রেস থেকে পরীক্ষার খাতা ক্রয় করেন। খাতার মান নিশ্চিত করেননি। এছাড়াও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে দর যাচাই করা হয়নি। ক্রয় সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগপত্র দেখাতে গড়িমসি করেন। অপরদিকে উপজেলা শিক্ষা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনওকে তিনি অবহিত না করেই একক সিদ্ধান্তে খাতা ক্রয় করেন। প্রতি সেট খাতা সরকারি ক্রয় মূল্য ৪ টাকা ৯৫ পয়সা বলেও জানান শিক্ষা অফিসার।
শিক্ষা অফিসারের মুখে খাতা ক্রয়ের গল্প শুনে রীতিমতো ক্ষুদ্ধ হন ইউএনও। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে খাতার মান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। সরকার নির্ধারিত মূল্যের কিছু কম টাকায় খাতা ক্রয় করা হয়েছে এমন অনিয়ম উঠে আসে ইউএনও’র তদন্তে। তাই খাতা ক্রয়ের অনিয়মে যে টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে তা দ্রুত সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ পাল বলেন, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এ বিষয়ে কোনো প্রকার অনিয়ম ও পরীক্ষায় নকল সহ্য করা হবে না। এগুলো কঠোর হস্তে দমন করা হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দ্রুত সরকারি কোষাগারে অর্থ ফেরত দিবেন বলেও আশা করেন তিনি।