ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে জমির দলিল সম্পাদনের (রেজিষ্ট্রি) তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। দেওয়ানী আদালতে মামলা, জমির উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা, দলিলের নামজারী, জমাখারিজ, জমা একত্রিকরণ ও দাখিলা ছাড়াই জমির দলিল সম্পাদন করেছেন তিনি। এ ঘটনায় মামলার বাদি সাব-রেজিস্ট্রারকে বিবাদি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ দেওয়ানী আদালতে কবলা দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট মামলার বাদি সাইফুর রহমান লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যঞ্জয় শিকারী গত ১৬-০৮-২০১৭ ইং তারিখে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে একটি দলিল সম্পাদন করেছেন। যার ক্রমিক নং-৭৪৪৬, দলিল নং-৭৪৪১, জমির তফসিল:- ১২৫ নং ঝিনাইদহ মৌজা, সাবেক খতিয়ান নং- ৮৫৭ ও ৮৫৭/১, আর.এস খতিয়ান নং- ২১৩২ সাবেক দাগ নং-৮২৩ এর বাটা দাগ ১০৮১ আর.এস দাগ নং-১৭১৯ জমির পরিমাণ- সাড়ে ৮ শতক। জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি চল্লিশ লাখ টাকা। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী বর্তমানে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য ক্রয়কৃত জমির দলিলের ক্ষেত্রে নামজারী (নামপত্তন), জমা খারিজ ও হাল নাগাদ দাখিলা বাধ্যতামূলক। অথচ ওই দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নামজারী (নামপত্তন), জমা খারিজ ও হাল নাগাদ দাখিলা ছাড়াই সদর সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারী দলিল সম্পাদন করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে দলিল সম্পাদনের পরের দিন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ চক্রটি সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে যোগসাজস করে ১৭-০৮-২০১৭ ইং তারিখে সদর পৌর ভূমি অফিস থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদার) স্বাক্ষরিত ২টি দাখিলা সংগ্রহ করে। দাখিলার ক্রমিক নং-১৭০৮৭২ ও ১৭০৮৭৩ তারিখ ১৭-০৮-২০১৭ ইং। এরপর ওই চক্রটি উক্ত দাখিলা দু’টি পরের দিন তড়িঘড়ি করে ১৬-০৮-১৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নোটিশের সাথে সংযুক্তি করেন। উক্ত তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নোটিশের সাথে রক্ষিত দাখিলার তারিখ তদন্ত করে প্রমাণ করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত ১৬-০৮-২০১৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রিকৃৃত দলিলের ৭নং ক্রমিকে উল্লেখযোগ্য বিবরনীতে দলিল নং-৫৮৭৪ তারিখ ১৯-০৬-৮৮, দলিল নং-৫৪৭০ তারিখ-২৫-০৬-৮৯, দলিল নং-৮৬৩০ তারিখ-১০-০৯-১৯৯০ ইং, দলিল নং-১৭৮৬ তারিখ-১১-০৩-১৯৯৩ এবং দলিল নং-৪২২৭ তারিখ-২৪-০৫-২০০১। নামজারী, জমাখারিজ, জমা একত্রিকরণের জন্য গত ২৩-০৪-২০১৭ ইং তারিখে জমির দত্তা সাহিদুর রহমান ঝিনাইদহ সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি নামজারী কেসের আবেদন দাখিল করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পৌর ভূমি অফিস প্রতিবেদন দাখিল করেন। সংশ্লিষ্ট ইউএলএও নামজারী মোকদ্দমা নং-৫৫৯০/৯-১/২০১৬-২০১৭ ইং মামলাটি খারিজের জন্য সুপারিশ করেন। ইউএলএও এর প্রতিবেদনের আলোকে সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ০২-০৮-১৭ ইং তারিখে নামজারীসহ জমাখারিজ ও একত্রিকরণের মিসকেস (মামলাটি) খারিজ করে দেন। জমি হস্তান্তর (বিক্রয়) করার ক্ষেত্রে যেসকল কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন তার কোনোটিই সঠিক না থাকা স্বত্বেও সাব-রেজিস্ট্রার মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে জমির কবলা দলিল সম্পাদন (রেজিষ্ট্র ) করেছেন। এছাড়া দলিল গ্রহিতাদের ক্ষেত্রে পৌর এলাকার মধ্যে আয়কর সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। উক্ত দলিলে ৭জন ক্রেতার মধ্যে চামেলী খাতুনের টিআইএন নং-৩৪৪৪৫৮২৫৮১৭৭ এবং সুলতানা জাকিয়া ফেরদৌসের টিআইএন নং-৩৪৪৯৫৮২৫৮১৭৭ এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ভূয়া টিআইএন নং- ব্যবহার করে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় মামলার বাদি সাইফুর রহমান ১৬-০৮-২০১৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত কবলা দলিল নং-৭৪৪১ বাতিলের জন্য গত ০৯-১০-২০১৭ ইং তারিখে সাব-রেজিস্ট্রার, বিক্রেতা ও ক্রেতাসহ ৯জনকে বিবাদি করে বিজ্ঞ ঝিনাইদহ যুগ্ম-জেলা জজ ১ম আদালতে উক্ত দলিল বাতিলের জন্য মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- দেং-৭৮/১৭ তারিখ ০৯-১০-২০১৭ ইং। বিবাদিরা হলেন, দত্তা-সাহিদুর রহমান, সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারী, কাজী মাহবুবুর রহমান, টিপু সুলতান, ওলিয়ার রহমান, মামুন আজিজ, চামেলী খাতুন, জল্পনা রানী বিশ্বাস ও সুলতানা জাকিয়া ফেরদৌস। এব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দলিল সম্পাদনের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।