ভিক্ষা করতে চান না কার্পাসডাঙ্গার ইছাহক

হাসেম রেজা: চোখের দৃষ্টি যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীর নামক যন্ত্রটি। তবু জীবনের শেষ বেলায় ভিক্ষা করে বাঁচতে চান না দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ভূমিহীনপাড়ার আবু ইছাহক (৯০)। জীবনের শুরুতে অন্যের জমি বর্গা চাষাবাদ করতেন। এরপর কামলা খাটা শুরু করেন। একটানা ৫০ বছর ধরে কামলা খাটছি এখন আর শরীরে পারে না বাজারে কাগজ ও বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের কোনো চাষাবাদের জমি নেই, বসতভিটাও নেই। ভূমিহীনপাড়ার আশ্রয় কেন্দ্রের একটি ঘরে আমি একা থাকি। আবু ইছাহক প্রতিদিন কার্পাসডাঙ্গার বাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে কাগজ ও বোতল কুড়িয়ে মাথায় কখনো কাঁধে করে অন্যত্র কেজি প্রতি ৫ টাকা দরে বিক্রি করে সংসার চালান। এতে সারাদিনে মাত্র ৫০ কিংবা ৭০ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়ে কোনো রকমে চলে সংসার। যেদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন সেদিন আয় বন্ধ হয়ে যায়। কষ্টে পড়েন তিনি। এরপরেও বার্ধক্যের কাছে মাথা নত করেননি। ভিক্ষা বৃত্তিতে যাননি। বরং পরিশ্রম করে বেঁচে থাকতে চান দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ভূমিহীনপাড়ার আবু ইছাহক। আবু ইছাহক দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বয়স ৯০ বছর। তবে আবু ইছাহকের দাবি তার প্রকৃত বয়স একশ হতে আর মাত্র ৩ বছর বাকি। তিনি আরও জানান, তার এক ছেলে। ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র থাকে আমার দেখার কেউ নেই শুধুমাত্র আমি খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। ছেলে ভ্যান চালায়। ছেলের রোজগার আগের মতো হয় না। তাই বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এখন জীবনের অনেক কঠিন সময় পার করছেন তিনি। শরীর না চললেও জীবনের তাগিদে বাজারে কাগজ ও বোতল কুড়িয়ে অর্থ আয়ের জন্য বের হতে হচ্ছে প্রতিদিন। বয়স্কভাতার সামান্য টাকা দিয়ে কোনোমতেই আর চলছে না স্বামী-স্ত্রীর সংসার। তাই তিনি বলেন বার্ধক্যের কাছে মাথানত করতে রাজি না। না খেয়ে থাকবো তবু ভিক্ষা বৃত্তিতে যাবো না বলে এ প্রতিবেদকের কাছে অঝরে কাঁদতে থাকে ইছাহক।