গাংনীর কাজিপুর সীমান্তে রোহিঙ্গা ঠেলে দেয়ার সময় বিএসএফ সদস্য আটক

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর সীমান্ত থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকালে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে আটক করে কাজিপুর ক্যাম্পে নেয় বিজিবি সদস্যরা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পুশব্যাকের চেষ্টাকালে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আটক বিএসএফ সদস্য এসআই লিটন সরকার গান্ধিনা ক্যাম্প সদস্য বলে জানা গেছে।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, কাজিপুর সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জড়ো করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হতে পারে বলে খবর পায় সীমান্তবাসী ও বিজিবি। তাই গত কয়েকদিন ধরে কাজিপুর সীমান্তে রাত জেগে পাহারা করছিলেন সীমান্তবাসী। কাজিপুর গ্রামের বর্ডারপাড়ার কয়েকজন বলেন, গতরাতে বিজিবি সদস্যদের সাথে গ্রামের ২০-২৫ জন পাহারা করছিলেন। সীমান্তের আটকবরের কাছে অবস্থান করছিলেন তারা। রাত ১০টার দিকে সীমান্তের ভারতীয় কাঁটাতারের ১১০ নম্বর গেট খুলে দেয় বিএফএস সদস্যরা। সেখানে বেশকিছু নারী-পুরুষের দেখা মেলে। তারা রোহিঙ্গা হতে পারে বলে সন্দেহে বিজিবি ও এলাকাবাসী সজাগ হয়। এর কিছু সময় পরে ১৪৬/৪ এস পিলার এলাকা দিয়ে সাধারণ পোশাকে বিএসএফ’র তিন সদস্য বাংলাদেশের সীমানায় অবৈধ প্রবেশ করে। বিজিবি ও এলাকাবাসী তাদের প্রতিরোধ করলে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় লিটন সরকারকে আটক করে বিজিবি। বাংলাদেশ ভূখ-ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে আটক করে কাজিপুর বিওপিতে আনা হয়। খবর পেয়ে এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজিপুর বিওপির আশেপাশে জড়ো হয়। ওপারে ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ এবং এপারে বিজিবি-জনতার উপস্থিতিতে চরম উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্যদের অনুপ্রবেশ ও পুশব্যাক ঠেকানোর কথা বলেন সীমান্তের লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ওই তিন বিএসএফ সদস্য রাস্তা দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু বিজিবি ও এলাকাবাসীর সতর্কতায় তা ভেস্তে গেছে। বিএসএফ সদস্যদের ধাওয়া করার সময় বিএসএফ সদস্যরা ভড়কে যায়। যাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার জন্য জড়ো করা হয়েছিলো নিমিষেই সেখান থেকে তাদেরকে সরিয়ে নেয় বিএসএফ।
অস্ত্র ছাড়াই বিএসএফ’র মোকাবেলা করায় এলাকাবাসী ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে। দুঃসাহসিক এ কাজে নিজ এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রশংসা করা হচ্ছে।
আটককৃত ব্যক্তি বিএসএফ সদস্য কিনা তা যাচাই করছে বিজিবি। সে ভারতীয় নাগরিক বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে বিজিবি।
এদিকে বিএসএফ সদস্য আটকের ঘটনায় বিএসএফ গান্ধিনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে বিজিবি কাজিপুর বিওপির প্রতিনিধিদের সাথে পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেয়। রাত সাড়ে এগারটার দিকে গান্ধিনা গ্রামের ইউপি সদস্য আবু হোসেন বিএসএফ’র পত্র নিয়ে কাজিপুর বিজিবি বিওপিতে পৌঁছান। বিজিবি প্রতিনিধিদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে পতাকা বৈঠকে সম্মত হয় বিজিবি। বাংলাদেশ সময় তার পৌনে ১টার দিকে পতাকা বৈঠকে রাজি হলে আবু ভারতে ফিরে যায়। রাত তিনটার দিকে কাজিপুর আটকবর এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছিলো।
এদিকে ভারতীয় বিএসএফ আটক ও রোহিঙ্গা পুশব্যাক চেষ্টায় বিজিবির দায়িত্বশীল কারো কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গেল ২৫ অক্টোবর মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা সীমান্ত দিয়ে একই পরিবারের ছয় রোহিঙ্গা সদস্যকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। যাদেরকে পুলিশ আটক করে। পরে মুজিবনর বিজিবি বিওপি তাদের গ্রহণ করে। ওই সময় থেকেই সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বিজিবি ও এলাকাবাসী।