গাংনীতে দু’দিনের ব্যবধানে আরো এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সহড়াবাড়িয়া গ্রামের একটি ডোবা থেকে কলিম উদ্দীন (৩৩) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে গাংনী থানা পুলিশ। বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশের ২২ দিন পর গতকাল বুধবার দুপুরে ওই গ্রামের হাসিবুর রহমানের ডোবা থেকে বিবস্ত্র মরদেহের সন্ধান পায় স্থানীয়রা। তার শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। তাই মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে পারছে না কলিম উদ্দীনের পরিবার ও পুলিশ। কলিম উদ্দীন ওই গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের জামাতা ও একই উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত জোয়াদ আলীর ছেলে। দেনায় জড়িয়ে সে আত্মগোপন করে বলে পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে। এর আগে ৬ নভেম্বর সীমান্তবর্তী কাজিপুর মাঠ থেকে মস্তকবিহীন এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, সহড়াবাড়িয়া গ্রামের নোনার বিলের পাশে ইছাহাক আলী মিয়ার ছেলে হাসিবুরের ডোবা পুকুর রয়েছে। শ্যাওলাভরা পুকুরে গতকাল দুপুরে মানুষের দেহের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন পথচারীরা। এ খবর পেয়ে গ্রাম ও আশেপাশের উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। মরদেহ উপুড় হয়ে পানিতে ডুবে থাকায় পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিলো না। কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন ও পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) কাফরুজ্জামানসহ পুলিশের একটি দল। দুই গ্রামপুলিশকে পানিতে নামিয়ে মরদেহ ওপরে তোলা হয়। এ সময় চেহারা দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কলিম উদ্দীনের স্ত্রী ও তার স্বজনরা।
কলিম উদ্দীনের স্ত্রী দুইসন্তানের জননী বিলকিছ খাতুন জানান, ঋণের দায়ে ২২ দিন আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে সে ফিরে আসেনি। অভাবের কারণেই সে আত্মগোপনে ছিলো। তার সাথে পরিবারের কোনো যোগাযোগও হয়নি। প্রকাশ্য কোনো শত্রু না থাকায় তার মৃত্যুর বিষয়ে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।
পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, আপন দুই ভাইয়ের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ৭/৮ মাস আগে দুই শিশু পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরালয়ে বসবাস শুরু করেন কলিম উদ্দীন। সেখানে দিনমজুরি ও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। চারটি এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে সে হিমশিম খাচ্ছিলো। এছাড়াও মহাম্মদপুর গ্রামের কুখ্যাত সুদখোর গোপালের হুমকিতেই সে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়।
কলিম উদ্দীনের স্ত্রী বিলকিছ খাতুন ও শাশুড়ি ছায়রা খাতুন জানান, কয়েক মাস আগে গোপালের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়। সুদ হিসেবে প্রতিদিন ২শ টাকা পরিশোধ করা হতো। দুই মাস টাকা দিতে না পারায় গোপাল সহড়াবাড়িয়া গ্রামে যায়। কলিম উদ্দীনকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে হুমকি দেয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে খুঁজে বের করে টাকা আদায় ও মারধরের হুমকি দিয়ে চলে যায়। গোপালের ভয়ে অসহায় পরিবারটি চরম আতঙ্কের মধ্যেই বসবাস করছিলো। কলিম উদ্দীনকে যদি কেউ হত্যা করে থাকে তাহলে এর পেছনে গোপালের হাত থাকলেও থাকতে পারে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে শ্বশুরবাড়ির গ্রাম সহড়াবাড়িয়া কবরস্থানে রাত ৯টার দিকে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। কলিম উদ্দীনের আপন ভাইসহ স্বজনরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মেহেরপুর পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে মরদেহ ময়না করানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হত্যাকা-ের কোনো আলামত মেলেনি। তবে বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে গাংনী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন সহড়াবাড়িয়া গ্রামের এক গ্রাম পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কাজিপুর মাঠ থেকে উদ্ধার হওয়া মস্তকবিহীন মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন সম্পন্ন করেছে পুলিশ। তবে ওই ব্যক্তির ডিএনএ আলামত ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করেছেন ময়নাতদন্তকারীরা।