রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতনভাতার দাবিতে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন

স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতনভাতা ও পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধার দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে দেশের সকল পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহসহ দেশের প্রায় প্রতিটি পৌরসভায় এ কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় কর্মবিরতি চলাকালে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি প্রকৌশলী আয়ুব আলী বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক টিকাদান সুপারভাইজার আলী হোসেন। অর্ধদিবস কর্মবিরতি চলাকালে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ গ্রহণ করেন। কর্মবিরতির কারণে এসময় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নাগরিকদের সেবা পেতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
দর্শনা অফিস জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে দর্শনা পৌরসভায় অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি রাখা হয়। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও পেনশনের দাবীতে বাংলাদেশ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানে এ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। দর্শনা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ্ আলমের সভপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন, সাধারণ সম্পাদক এসএম রুমি আলম পলাশ, হাজী ইউনুচ আলী, রুহুল আমিন, আরেফিন হোসেন, মমিনুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ। সার্বিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছেন, মেহেরপুর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সরকারি কোষাগার হতে প্রদানের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী। গতকাল সোমবার বেলা ১০টা হতে পৌরসভা কার্যালয়ে এ অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।
কর্মবিরতি চলাকালে আলোচনা সভায় পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি পৌর সচিব তফিকুল আলম বলেন, দেশের ৩২৭ পৌরসভার মধ্যে বেশিরভাগ পৌরসভাতে বেতন-ভাতাদি অনিশ্চিত থাকে। ২ থেকে ৫৫ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া রয়েছে অনেক পৌরসভায়। বহু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবসর পরবর্তী আনুতোষিক থেকেও বঞ্চিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এভাবে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের তুলনায় বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন- মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের ৩ বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য তিনি গড়ঃযবৎ ড়ভ ঐঁসধহরঃু ‘মানবতার মা’ উপাধিতে ভূষিত হয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসায় সিক্ত হয়েছেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের সমস্যা সমাধানে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মেহেরপুর পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হাসান দিপু বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের দুঃখের কথা জানাচ্ছি। আমরা সময়মত বেতন-ভাতাদি না পাওয়ার কারনে আমাদের সন্তানেরা ও বৃদ্ধ মা-বাবারা অনেক কষ্ট ভোগ করে থাকেন। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও ৩ বেলা খাবারের নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি আমাদের শিশুদের ও বৃদ্ধ মা-বাবাদের দুর্দশার কথা ভেবে সকল পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে দেয়ার নির্দেশ দিবেন।
পৌরকর আদায়কারী শফিউদ্দিনের সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম খাঁন, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, স্টোরকিপার জহিরুল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম প্রমুখ। আগামী ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকাল ৯টা থেকে বেলা ৫টা পর্যন্ত দেশের ৩২৭ পৌরসভায় একযোগে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থাকে বেলা ১টা পর্যন্ত পৌরসভা কার্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনু’র পূর্ণ সমর্থনে বক্তব্য রাখেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ সদর উদ্দিন ভোলা, প্যানেল মেয়র-৩ সামসাদ রানু, কাউন্সিলর মামুন অর রশিদ হাসান, কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম, কর্মকর্তাদের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী তসলিম উদ্দিন, কর্মচারীদের মধ্যে আনিছুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম নিলা, খন্দকার খাইরুল ইসলাম, খন্দকার আসাদুল ইসলাম, জেহের আলী, মুস্তাফিজুর রহমান সোহাগ, হাফিজুর রহমান, আবু সায়েম, আব্দুস ছাত্তার, জয় কুমার বিশ্বাস, শেফালী সাধু খা, চন্দনা রানী, মাজেদা বেগম প্রমুখ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর পৌরসভার প্রধান ভবনের গেট বন্ধ করে তারা কর্মকর্তা কর্মচারীরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি শুরু করেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট চলে। তাদের এ ন্যায্য দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে অবস্থান ধর্মঘটে যোগদেন পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ পৌর পরিষদের ১২ কাউন্সিলর। বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে আহূত অবস্থান ধর্মঘট হতে অবিলম্বে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় সঙ্গত একদফার দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পৌর সচিব জায়েদ হোসেন, পৌর কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজেদা আক্তার, সদস্য জামাল উদ্দিন, তরিকুল ইসলাম, আব্দুল গণি ও হাসানুজ্জামান পুলক প্রমুখ। অবস্থান ধর্মঘটে পৌরসভার ৫৪জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সুইপার একযোগে অংশগ্রহণ করায় কার্যত পৌরসভার দৈনন্দিন কার্যক্রম বিঘিœত হয়।
গাংনী অফিস জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমাবার সকাল ৯টা থেকে বেলা পর্যন্ত গাংনী পৌরসভা চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় পৌরসভার কাজকর্ম করেননি আন্দোলনকারীরা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গাংনী পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারী ফাউন্ডেশনের সভাপতি আজিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক ইনামুল হক। উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রকৌশলী শামীম রেজা, হিসাব সহকারী জুলফিকার আলী, প্রধান সহকারী আসলাম আলীসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর সভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে। রাষ্টীয় কোষাগার থেকে বাংলাদেশের ৩২৭ পৌরসভায় কর্মরত ৩২ হাজার ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও বেতন-ভাতাদিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ কর্মসূচির ডাক দেয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেকেন্দার আলী, পৌর সচিব ও দাবি আদায় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এনামুল হক, জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী অহীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, কাউনন্সিলর কামাল হোসেন, রেজাউল ইসলাম, জাফর ইকবাল শান্তি, ভারপ্রাপ্ত পৌর হিসাব রক্ষক শফিকুল ইসলাম শফি, পৌর কর্মচারী অশিত কুমার ঘোষ, রমজান আলী, ফিরোজ আহাম্মেদ ও আবু সাদাত স্বপন প্রমুখ। পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এ কর্মবিরতি চলাকালে পৌর মেয়র জাহিদুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হয়ে পৌর সভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দেয়ার প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সোমবার সকালে মহেশপুর পৌরসভার সামনে মহেশপুর পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারের কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানের দাবিতে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মইবুল আলম খান পিন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মবিরতিতে বক্তব্য রাখেন মহেশপুর পৌরসভার প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান, উচ্চমান সহকারী ষষ্ঠীচরণ রায় প্রমুখ। এছাড়া কর্মবিরতিতে পৌরসভার সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করে। বক্তরা তাদের বক্তব্যে অবিলম্বে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বেতন-ভাতা ও পেনশনের ব্যবস্থা সরকারি কোষাগার থেকে প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।
ফরিদপুরের মধুখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সোমাবর সকাল সাড়ে ১১টায় মধুখালী পৌর ভবনের বারান্দায় প্যানেল মেয়র মির্জা আব্বাস হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মবিরতিতে বক্তব্য রাখেন পৌর সচিব রুহুল আমিন, কাউন্সিলর আনিসুর রহমান লিটন, মোশারফ হোসেন, মির্জা আবু জাফর, হাজি জাহিদুল ইসলাম জিন্নাহ, মধুখালী পৌরসভার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজিব হাসানসহ প্রমুখ।