হাসি কান্নার উৎস অনুভূতির ক্ষেত্র সমাজভেদে ভিন্ন

বিশ্বের সব মানুষের হাসি-কান্নার ধরন, বর্ণ অভিন্ন হলেও উৎস অনুভূতির ক্ষেত্রে রয়েছে তারতম্য। সুখ-বেদনা অনুভবের হৃদয় গড়ে মূলত সমাজ। তা না হলে জাতি দুর্বল হয়ে পড়বে ভেবে নবজাতককে কি মায়ের কোল থেকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে গড়িয়ে দিয়ে পরীক্ষা করার প্রথা থাকতো? ওই সমাজের মানুষের হৃদয় কি সমাজই শক্ত করেনি? বিশ্বে এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে যা দিয়ে প্রমাণ করা যায়, সব সমাজের সুখ-দুঃখ অনুভবের মাপকাঠি এক নয়। এক হলে আমাদের সমাজের কুমারি প্রসূতির সন্তান ছুড়ে ফেলার কষ্টের মাত্রাটা অবশ্যই অন্যরকম হতো। ঘটতে পারতো তার বহির্প্রকাশও। একজন মা তার সন্তানকে আগলে রাখছে, আরেক মা তার সন্তান ছুড়ে ফেলার জন্য আড়াল খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে। এটা কি হওয়া উচিত?
চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার পল্লি দলিয়ারপুরের এক কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। সন্তান প্রসবের কিছুক্ষণ আগে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ডায়রিয়া রোগী বলে ভর্তি করা হয়। প্রসব বেদনা তীব্র হলে নেয়া হয় প্রসূতি ওয়ার্ডে। কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। ওই মা রাতে তার সন্তানকে কাছে রাখতে পারলেও সকালে সদ্যভূমিষ্ঠ কন্যাকে ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়। প্রথমে বিষয়টি গোপন থাকলেও পরে ফাঁস হলে কিশোরী কোনো রকম রাগঢাক ছাড়াই বলে, তাকে ফুসলিয়ে সর্বনাশ করেছে তারই বড়বোনের স্বামী দুলাভাই রামনগর সেন্টারপাড়ার ইব্রাহিম। তিনি পেশায় শাটারমিস্ত্রি। নিজের মহল্লায় মৃদুভাষী এবং সৎচরিত্রের অধিকারী হিসেবেই পরিচিত। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়েছে, সদ্য প্রসূত কন্যাসন্তান ফেলে যাওয়ার সময় এক সেবিকাকে বিষয়টি বলে যায়। সেবিকা ওই সন্তান হাসপাতালে রেখে যাওয়ার মধ্যে অপরাধ না দেখে বরঞ্চ তাদের তথা প্রসূতির সাথে থাকা তার মা ও নানিকে উৎসাহিত করে বলেছে, ওই সন্তান নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ভালো কোনো দম্পতির নিকট দেয়া হবে। এছাড়া কিশোরীকে যে ভগ্নিপতি সর্বনাশ করেছে, সেই ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে পরিবারের তরফে তেমন কোনো নালিশ নেই, বরঞ্চ কিশোরীর বড়বোন ওই কিশোরীকেই দোষারোপ করে নিজের স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। একজন অপ্রাপ্ত বয়সের কোনো নারীকে কি ওইভাবে ফুসলে সর্বনাশ করা যায়? এ প্রশ্নের জবাবের চেয়ে কিশোরীর বড়বোন এখন তার সংসার সামলানো নিয়েই ব্যস্ত। পুলিশ? শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দর্শকের ভূমিকাতেই ছিলো।
সমাজে বহু দম্পতি রয়েছে যাদের সন্তান হয় না। সন্তানের জন্য তাদের কষ্টের কূলকিনার নেই। ওই দম্পতির জন্য নবজাতক দত্তক নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আদালতের মাধ্যমেও বেওয়ারিশ নবজাতককে সন্তান হিসেবে গ্রহণেরও বিধান বিদ্যমান। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরদিন সকালে আপনহারা নবজাতককে নেয়ার জন্য অনেকেই উদগ্রিব। স্বাভাবিক। নবজাতকের ঠাঁই নিশ্চয় হবে। কিন্তু কিশোরীকে যে ব্যক্তি ফুসলে সর্বনাশ করলো তার কিছুই হবে না? কিশোরী কি সত্যিই সন্তানের স্মৃতি ভুলতে চায়? নাকি তাকে বাধ্য করা হচ্ছে? এসব প্রশ্নের জবাব কে খুঁজবে? সমাজের কাছে অনেক কিছুই অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ে। প্রয়োজনের তাগিদে বদলায়ও? তা না হলে কি সতীদাহ প্রথা গত হতো?

Leave a comment