১৭ দিন ঢাকায় চিকিৎসাধীন থেকেও হেরে গেলেন আলমডাঙ্গার রোয়াকুলির গৃহবধূ আলিফা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: কেরোসিনের আগুনে ঝলসে যাওয়া আলমডাঙ্গা রোয়াকুলির গৃহবধূ আলিফা মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল ভোররাতে তিনি মারা যান। নিহত আলিফা রোয়াকুলির বিজিবি সদস্য খালিদ হাসান সুমনের স্ত্রী এবং এবং একই উপজেলার রুইথনপুর গ্রামের কিতাব আলীর মেয়ে। আজ আলিফার লাশ রোয়াকুলি আনা হচ্ছে বলে গ্রামসূত্রে জানা গেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে তিনি তার স্বামীগৃহ আলমডাঙ্গার রোয়াকুলিতে অগ্নিদগ্ধ হন। তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার আভিযোগে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ শাশুড়ি লালীয়া বেগমকে গ্রেফতার করে। স্বামী বিজিবি সদস্য খালিদ হাসান সুমন তার অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে ওই দিনই ঢাকার মেডিকেল কলেজের বার্নইউনিটের উদ্দেশে রওনা দেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা রইথনপুরের কিতাব আলীর মেয়ে আলিফার (২২) সাথে আনুমানিক ২ বছর আগে বিয়ে হয় একই উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের রোয়াকুলি গ্রামের আইনাল হকের ছেলে খালিদ হাসান সুমনের। সুমন বিজিবি সদস্য। নওগাঁয় পোস্টিং। ২ মাসের ছুটিতে আসেন। স্বামীর সাথে স্ত্রীর তুমূল ঝগড়া বাধে। পড়শিরা এ তথ্য দিয়ে বলেছে, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ছুটে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বাড়ির পুত্রবধূ আরিফা। স্বামীসহ স্বামীর লোকজন বলতে থাকে, আলিফা নিজেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়েছে। ১১ মাসের শিশু ছেলে সাইমকে রেখে কি কোনো মা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়? এ প্রশ্ন তুলতেই স্বামীগৃহের লোকজনের অবয়বে ফুটে ওঠে সন্দেহের ছাপ। অগ্নিদগ্ধ আলিফাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হাপাতালে সাংবাদিকদের সামনে তিনি নিজেই মুখ খোলেন।
অভিযোগ তুলে বলেন, স্বামী ও শাশুড়ি তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। ঘটনার দিন বিকেলে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আলিফার শাশুড়ি লালীয়া বেগমকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নেন। অগ্নিদগ্ধ আলিফার শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি ঝলসে গিয়েছিলো বলে ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন জানান। মুখম-লবাদে বুক থেকে নিচের অংশের প্রায় পুরোটাই ঝলসে যায় তার। চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দেন। ওই দিনই তাকে নেয়া হয় ঢাকায়।
গৃহবধূর স্বাজনরা ওইদিন অভিযোগ করেন, স্বামীর অবর্তমানে বেশ কিছু দিন ধরে যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আলিফা খাতুনকে নির্যাতন করতো। বিষয়টি জানার পর কিছুদিন আগে আলিফা খাতুনের পিতা-মাতা মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। কয়েক দিন আগে খালিদ হাসানসহ তার পরিবারের লোকজন রুইথনপুর গ্রামে আলিফার পিতার বাড়িতে যান। তারা আলিফা খাতুনকে এক পর্যায়ে আবারও বাড়িতে নিয়ে যান।
আলিফার মাসহ তার নিকটজনেরা জামাই খালিদ হাসান সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আরও বলেন, বিয়ের সময় নগদ ৩ লাখ টাকা যৌতুক দেয়া হয়। আর আসবাবপত্রে কোনো কমতি রাখা হয়নি। অলিফাকে বিয়ের পর থেকেই ওই শ্বশুরবাড়ি না হয়, বাপের বাড়ি ফেলে রেখেছে। বিয়ের শুরু থেকেই অলিফার ইচ্ছে ছিলো স্বামীর সাথে স্বামীর কর্মস্থলের কোয়াটারে থাকা। এ নিয়েই মূলত ওদের মধ্যে মনোমালিন্য দানা বাধে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকা অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ গত সোমবার দিনগত রাত ৩টার দিকে মারা গেছেন বলে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন রোয়াকুলি গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার মতিয়ার রহমান।