ঝিনাইদহের বেজিমারা গ্রামে দুই সন্তানের জননীর মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন

বাজার গোপালপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের বেজিমারা গ্রামে দুই সন্তানের জননী নার্গিস বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন রটেছে। নিহতের ছেলে সুমন (১২) তার মায়ের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলে দাবি করে পিতা আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে স্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উত্তোলন করে। কিন্তু ছেলে সুুমনের অভিযোগ গ্রামের ম-ল মাতব্বরদের কথার মুখে খুব বেশি সময় টেকেনি। গত সোমবার দুপুরে গৃহবধূ নার্গিসের লাশ উদ্ধারের পরই তার মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে আত্মগোপন করে রাখেন। স্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনকে না জানিয়ে শিশু মেয়ের নামে ৩ শতক জমি লিখে দেয়ার সিন্ধান্ত করে দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। শেষ পর্যন্ত গৃহবধূর মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো বাদী না থাকায় ময়ন্ততদন্ত ছাড়াই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বেজিমারা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের সাথে বছর পাঁচেক আগে একই ইউয়িনের মির্জাপুর গ্রামের তাহাজ উদ্দিনের মেয়ে নার্গিস বেগম উভয়ই ভালোবেসে বিয়ে করেন। নার্গিসের যেমন এটা দ্বিতীয় বিয়ে পূর্বের পক্ষের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তেমনি রাজ্জাকেরও পূর্বে স্ত্রীসহ এক সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই রাজ্জাকের সংসারে প্রায়ই কলহ ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। নার্গিসের ছেলে সুমন এতটুকু বয়সেই ডাকবাংলা বাজারের একটি খাবার হোটেলে কাজ করে। সেখানে যে টাকা পায় সেই টাকাও তার মায়ের সংসারে এনেদিতো। যা দিয়ে সংসারে খানিকটা অভাব পুরন হতো।
নিহতের ছেলে সুমন জানায়, সংসারের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই তার পিতা মাকে মারধর করতো। সংসারে তার মাকে প্রথম দিকে ভালো জানলেও পরে চরম অবহেলা করতো। সে অভিযোগ করে আরও জানায়, গত ৫-৬ দিন আগে তার মাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। বাজার থেকে জ¦র আর ব্যথার বড়ি এনে দেয়া হয়। গত সোমবার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। জ¦রে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু কখন তার মৃত্যু হয়েছে কেউ দেখেনি। দুপুরের দিকে তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। তার মায়ের মৃত্যু অস্বাভাবিক বলে সে দাবি করে বলে, তার শরীরের আঘাতের দাগ রয়েছে। লাশের ডাক্তারি রিপোর্ট তৈরি হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশী এবং এনজিও কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নার্গিস কখন মারা গেছে একমাত্র তার স্বামী রাজ্জাকই জানেন, কারণ প্রতিদিন সকালে উঠলেও নার্গিসকে মৃত্যুর দিন সকালে দেখা যায়নি এমনকি তার কথাও শুনতে পায়নি কেউ। সকালে ছোট মেয়েকে ১০ টাকা দিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে রাজ্জাক বেজিমারার বউ বাজারে বসেছিলো। দুপুরের দিকে এনজিও কর্মী কিস্তি নিতে এসে দেখেন বাড়িতে কেউ নেই এবং ঘরের দরজায় ছিটকানি দেয়া। সে সময় তিনি রাজ্জাকের নিকট মোবাইলে যোগযোগ করেন। তিনি বাড়িতে এসে এনজিও কর্মীর সামনে ঘরের দরজার ছিটকাকি খোলেন এবং তার স্ত্রী মারা গেছে বলে চিৎকার করেন। এনজিও কর্মী কিস্তির টাকা না নিয়ে চলে যান। তাদের দাবি রাজ্জাককে জিজ্ঞাসা করলে মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।
নিহতের ভাই ইদ্রিস আলী জানান, আমার বোনের বিয়ে হয়, কিন্তু সেখানে ভাত খেতে দেয়নি রাজ্জাক। নানাভাবে ফুঁসলিয়ে সংসার ভেঙে বিয়ে করে। রাজ্জাকের পূর্বের সংসার স্ত্রী-সন্তান সবই রয়েছে। এরপরও তাকে বিয়ে করে কয়েক মাস যেতে না যেতেই নির্যাতন মারধর করতো। কয়েক দিন আগে চরমভাবে পিটিয়ে জখম করে। বোন আমার বাড়িতে এসে তার দুঃখের অনেক কথা জানায়। এটাই যে তার শেষ কথা হবে কে জানতো। আমি নিজেই কোনো রকম সংসার চালাই এরপর বোনের সংসারের দুঃখের কথা শুনে তাকে রাজ্জাকের সংসারে যাওয়ার জন্য বুঝিয়ে পাঠাই। হঠাৎ করেই বোনের মৃত্যুর সংবাদ পেলাম তাও মৃত্যু নিয়ে নানা কথা শুনছি। তিনি আরও জানান, আমি নিজের সংসারই চালাতে হিমশিম খাই। বোনের মৃত্যুর ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা চালানোর এত টাকা কোথায় পাবো। তবে ময়নাতদন্ত করলে কিভাবে মারা গেছে ডাক্তারের রিপোর্ট পেলে জানা যেত।
স্থানীয় মেম্বার আলীম উদ্দিন জানান, গত কয়েক দিন আগে নার্গিস টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়েছিলো। জ¦রে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে নার্গিস বেগমের অকাল মৃত্যুতে নানা গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন একটা অভিযোগ উঠেছিলো যা পরে কোনো বাদী না থাকায় স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নার্র্গিসের নাবালক মেয়ের নামে ৩ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার সিন্ধান্ত করেছে। পরে প্রশাসনের আনুমতি নিয়ে পরিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে নিহতের স্বামী আব্দুর রাজ্জাক স্ত্রী নার্গিসের মৃত্যুর পর নিজেকে আত্মগোপন করে রাখায় তার কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।