পাচ্ছেন যুগ্মসচিবের মর্যাদা :পদোন্নতির দ্বার খুলছে ১৩তম ব্যাচ কর্মকর্তাদের

স্টাফ রিপোর্টার: প্রশাসনের ১৩তম বিসিএস ব্যাচকে গুরুত্ব দিয়ে উপসচিব পদ থেকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, ১১, ১৩, ১৫, ১৭ ও ১৮তম ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিবদের উপেক্ষা করে সম্প্রতি ২২তম ব্যাচের বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এতে  প্রশাসনের ভেতর বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের উপসচিব করার লক্ষ্যে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভায় গুরুত্ব দেয়া হয়। এরপর তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়নি। এখন ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এদিকে ১৮তম ব্যাচের কয়েক সিনিয়র সহকারী সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারের আস্থাভাজনরাই পদোন্নতি পাচ্ছেন। আর যারা নিরীহ তারা পদোন্নতি পাওয়া তো দূরের কথা সিলেকশন বোর্ডের তালিকায় তাদের নামই ওঠে না। গতকাল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘৮৫ ব্যাচের’ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কথায় বলে জোর যার মুল্লুক তার। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার ব্যাচম্যানরা অধিকাংশই এখন অতিরিক্ত সচিব, অনেকেই ভারপ্রাপ্ত সচিব পর্যন্ত হয়েছেন।
আপনাকে কী কারণে দেয়া হচ্ছে না- এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাই আমাকে জড়িয়ে কোনো কিছু লেখেন না। এমনি সরকার আমাকে পদোন্নতি দিচ্ছে না, এসব বিষয়ে আমাকে কোড করলে চাকরি ধরে রাখাই দায় হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, চাকরি জীবনে আমার নেগেটিভ কিছুই ছিল না অথচ আমার পদোন্নতি হয়নি। এতে আমার মনে কষ্ট আছে। আমরা যেহেতু সরকারি চাকরিজীবী তাই আমাদের ক্ষোভ থাকতে নেই। পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দোষ দিচ্ছি না কারণ এটা আমার ভাগ্যের দোষ। আমাদের বড় বড় লোকজন তারাই এসব কলকাঠি নাড়ছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি পাওয়া একজন কর্মকর্তার চাকরির অধিকার। তবে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাঠামোর দিকে যেমন লক্ষ রাখতে হয় তেমনি সার্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় নিতে হয়। তবে ইতিপূর্বে যারা সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব হয়েছেন তাদের অধিকাংশ ২২তম ব্যাচের। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র উপসচিব বলেন, উপসচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি একটি নৈতিক দাবি। এর যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা বিবেচনা করেই প্রশাসনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কেউ পদোন্নতি চাইলেই পদোন্নতি দেওয়া হবে তা নয়। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি শুধু উপসচিব পদে পদোন্নতি দিতেই সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে চার ধাপে পদোন্নতি দিলেও বর্তমানে ১৮তম ব্যাচে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন সাতজন। প্রায় সব যোগ্যতা থাকলেও পদোন্নতি না পাওয়ায় বঞ্চিত কর্মকর্তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের দুঃখের কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চাকরিতে নিয়মিত হওয়ার পর ১০ বছর অতিক্রম করলেই সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করা যায়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্য নীতিমালা অনুযায়ী সমগ্র চাকরিকালের বাস্তব উপযুক্ততা বিবেচনা ছাড়াও নির্ধারিত কিছু মাপকাঠি বিবেচনা করা হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন, সিলেকশন  বোর্ড (এসএসবি) সুপারিশের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া হয়। এখানে কারা বঞ্চিত হচ্ছেন সেটি দেখবে কমিটি। তবে কাউকে বঞ্চিত করে পদোন্নতি বিষয়ে চিন্তা করা হয় না। যাদের পদোন্নতি হওয়ার সময় হয়েছে তারাই পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, অনেকেই সুবিধা না পেলেই সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চৌদ্দগুষ্ঠি ধোলাই করে। ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা যদি এ ধরনের আচরণ হয়। তাদের দিয়ে ভবিষ্যৎ কী হবে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, বিসিএস ক্যাডারের পদোন্নতি যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়। অনেকেই কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করেই পদোন্নতি আশা করেন। সিলেকশন বোর্ড সব বিষয়ে চিন্তা করে একজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে থাকে। এ কারণে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই আগে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।  পদোন্নতির জন্য আইনকানুন জানতে হবে। তবে এসব বিবেচনায় নিয়ে সিলেকশন বোর্ড পদোন্নতি দিয়ে থাকে। ধারাবাহিকভাবে সব ব্যাচের কর্মকর্তারাই পদোন্নতি পাবেন নিঃসন্দেহে।