নিখোঁজের দেড়মাস পর মুদি দোকানির গলিত লাশ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গা বাটিকাডাঙ্গার ফারুকের আত্মহত্যা না কি পরিকল্পিত হত্যা তা নিয়ে ধূম্রজাল

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বাটিকাডাঙ্গা গ্রামের ৪ সন্তানের জনক মুদি দোকানি ফারুক হোসেনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার ৪৩ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার বাড়ির পার্শ্ববর্তী মধু বিলের ধঞ্চে ক্ষেতের মধ্য থেকে ফারুকের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এটা কি আত্মহত্যা না জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিত হত্যা তা নিয়ে গ্রামে চলছে নানাগুঞ্জন। উদ্ধারকৃত লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পরিবার ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট শনিবার ফজরের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হন ফারুক। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেন না। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের বাটিকাডাঙ্গা গ্রামের মাঝেরপাড়ার বিল্লাল হোসেনের ছেলে ৪ সন্তানের জনক ফারুক হোসেনকে (৪৫) খোঁজাখুঁজি করেও পায় না পরিবারের লোকজন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে গ্রামের এক কিশোর মধুবিলে মাছ ধরার জন্য জাল পাততে যায়। বিলের ধঞ্চের মধ্যে একটি গলিত লাশ দেখতে পায় সে। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন সেখানে যায়। কয়েকজন লাশ দেখতে ধঞ্চের মধ্যে গেলে গলিত লাশের পাশে একটি লুঙ্গি ও ব্লু রঙের পাঞ্জাবি ভাসতে দেখা যায়। নিখোঁজ ফারুক এ ধরনের পোশাক পরতেন বলে প্রতিবেশীরা জানান। পোশাক দেখে লাশটি নিখোঁজ ফারুকের বলে পরিবারের লোকজন শনাক্ত করে। তবে গলিত লাশ দেখে শনাক্ত করার উপায় নেই। পরে খবর পেয়ে তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশ ধঞ্চের মধ্য থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করে।
প্রতিবেশী ও ফারুকের পিতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভূমিহীন বিল্লাল হোসেনের দু ছেলে। বড় ছেলে রেজাউল। ছোট ছেলে ফারুক হোসেন। ফরুক ৪ কন্যা সন্তানের জনক। দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মনোযোগী। তাইত ৪ মেয়েকে মাদরাসাতে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। জমিজমা না থাকায় পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি গড়াইটুপি বাজারে ছোট একটি মুদির দোকান দিয়ে সংসার চালাতেন। অপরদিকে রেজাউল একযুগ আগে পিতার জায়গা ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছে। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে বিল্লাল হোসেন জানান, স্ত্রী টিকারন নেছা প্যারালাইসিস হয়ে ঘরে পড়ে আছে, তিনি নিজে চলাচল করতে পারে না। নিকট আত্মীয়কে দিয়ে জিডি করতে পাঠিয়েছিলেন কিন্তু পুলিশ নেয়নি। এ ধরনের জিডি করতে নাকি রক্তের সম্পর্কের লোক লাগে। বড় ছেলে কাছে না থাকা স্ত্রীর এ অবস্থা, নিজে চলাচল করতে না পারা, শেষমেশ ছোট ছেলের মৃত্যু। সব মিলিয়ে আর্তনাতের ভাষা হরিয়ে ফেলেছে বিল্লাল হোসেন। এদিকে একটি সূত্র বলেছে, ভূমিহীন বিল্লাল হোসেন ভিটের জমি নিয়ে গ্রামের একজনের সাথে দীর্ঘদিন মামলা চলে আসছে। যে মামলা ফারুক দেখাশোনা করতো। নি¤œ আদালতের রায় আসে বিল্লাল হোসেনের পক্ষে। তাতেও ক্ষান্ত হয় না প্রতিপক্ষ। উচ্চ আদালতে আপিল করে। প্রতিপক্ষ জানে বিল্লাল টাকা খরচ করে মামলা চালাতে পারবে না। গ্রামবাসী জানায় ফারুক হোসেন অত্যান্ত ভালো মানুষ ছিলো। তার কোনো শত্রু থাকার কথা না। তার পরও ধর্মের প্রতি যার এতো মহব্বত তিনি আত্মহত্যা করবে কেনো। এদিকে ফারুকের গলিত লাশ উদ্ধারের পর থেকে জনেমনে নানা প্রশ্ন জেগেছে? সে কি আত্মহত্যা করেছে নাকি শত্রুতামূলকভাবে কেউ হত্যা করেছে? বিষয়টি গভীরভাবে ক্ষতিয়ে দেখা দরকার পুলিশের। তবে ফারুকের মৃত্যু নিয়ে ধূ¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই লিটন গাজী বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। আজ শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশের অবশিষ্ট অংশ পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হবে।