ধরিত্রীকে স্বস্তি দিতে রুখতে হবে পাখি নিধন

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকারই একটি জনপদের নাম বেলগাছি। সবুজে ভরা চমৎকার পরিবেশের জনপদের সচেতন যুবসমাজের প্রশংসনীয় বেশক’টা উদ্যোগের মধ্যে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার প্রয়াস অন্যতম। যে জনপদের একদল যুবক পাখিপ্রেমী, সেই জনপদেই কয়েকজন যুবক ইয়ারগান হাতে নিয়ে পাখি নিধনে ব্যস্ত। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে ভালো এবং মন্দের পার্থক্য বুঝতে নিশ্চয় কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। তাহলে ভালোদের স্বাগত জানিয়ে তাদের পাশে থেকে মন্দদের সুধরে নেয়ার দায়িত্বটা নিশ্চয় বুঝমান বড়দের নেয়া উচিত। বুঝিয়ে না পারলে শাস্তি দিতে কুণ্ঠাবোধ কেন?
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা সবুজে ভরা। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সবুজে ভরা জনপদকে আরও সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হয়ে আসছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বৃক্ষের বিকল্প নেই। কেননা, বৃক্ষই আমাদের অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। অক্সিজেন ছাড়া এক সেকেন্ডও বাঁচার সুযোগ নেই। বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা সামান্য হ্রাসেই প্রাণিকূলের হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়, আর সেই অক্সিজেনের জোগানদাতা বৃক্ষরাজির প্রতি যেমন অমানবিক হয়ে ওঠা মানে নিজেদের ওপরই অবিচার করা, তেমনই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পরিবেশের অন্য সব কিছুই রক্ষার দায়িত্ব মূলত আমাদেরই। বন্য পশুপাখি পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশই শুধু নয়, অক্সিজেন জোগানদাতা গাছ-গাছালির জন্য অতিব প্রয়োজনীয়। এরপরও নানা কারণে, বুঝে না বুঝে আমরা বন্যপ্রাণি নিধন করে চলেছি। এসব বন্ধ করতে বহু আগেই দেশে প্রণয়ন করা হয়েছে আইন। আইন প্রয়োগের জন্য লোকবলও নিযুক্ত রয়েছে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারপরও সমাজে সচেতনতার আলো ছড়ানোর সাথে সাথে সামাজিকভাবেই বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে নানামুখি উদ্যোগ নেয়ার উদাহরণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন হাতে টুটুবোর রাইফেল, ইয়ারগান নিয়ে পাখি শিকারের তেমন হিড়িক না থাকলেও কেউ কেউ যে মাঝে মাঝে ওইসব অস্ত্র নিয়ে ঘোরে তা গত শুক্রবার বেলগাছির ঘটনা সাক্ষ্য দেয়। পাখির দিকে তাক করা ইয়ারগানের গুলি গৃহবধূর মাথায় বিদ্ধ হওয়ার খবর মহল্লার সচেতন যুবসমাজেরই শুধু নয়, এলাকার সকলেরই মাথা ন্যুয়ে দিয়েছে। পাখি মারা ওই ইয়ারগানধারীর উপযুক্ত শাস্তি কাম্য। ছাড় পেলে অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটা অমূলক নয়।
পরিবেশের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে সমাজের সচেতন সাধারণ মানুষগুলোকেই সামাজিক সকল সমস্যা সমাধানে, সকল সংকট নিরসনে অগ্রণী অবদান রাখা প্রয়োজন। বিষয়টি সমাজের অধিকাংশ মানুষ উপলব্ধি করলেও দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন কেউ কেউ। কারো কারো নেতৃত্বে নেয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ। চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি পাখিদের জন্য নিরপদ এলাকা ঘোষণা তারই একটি। অথচ সেই এলাকাতেই ইয়ারগান নিয়ে পাখি নিধনের অপচেষ্টা। অবশ্যই পাখি নিধন রুখতে হবে, গড়ে তুলতে হবে পাখপাখালির অভয়ারণ্য। এ উদ্যোগ যতো তরান্বিত হবে, ততোই স্বস্তি পাবে ধরিত্রী। শান্তি পাবো আমরা।