মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে ওষ্ঠাগত জনজীবন

মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত প্রায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম চড়া। গত কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে চালের দাম। চালের মূল্য বৃদ্ধির এমন নজির বাংলাদেশে আর নেই। এর পেছনে কার বা কাদের কারসাজি ছিলো তা এখন আর কারো অজানা নয়। সরকার লাগাম টেনে ধরায় এর রাশ কিছুটা থামলেও বৃদ্ধির তুলনায় হ্রাস পাওয়ার গতি লক্ষ্যজনকভাবে কম। অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে আটার দামও বেড়েছে। সবজির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে অনেকদিন থেকেই। রাজধানীর বাজারগুলো তদারকি করলেই এর সত্যতা মিলবে সহজেই। এর বিপরীতে সাধারণ মানুষের আয় কী বেড়েছে? এমন প্রশ্নের সদুত্তর মেলা কঠিন নয়। এমতাবস্থায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অন্যদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের দাম ১০.৬৫ শতাংশ বা ৭২ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত ধারাবাহিক গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে প্রস্তাবগুলো করা হয়। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহল লোকসানের অজুহাত তুলেছে। তারা বলছেন, বর্তমানে ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে ঘাটতি থাকায় প্রতি ইউনিটে ৩ শতাংশ হারে লোকসান দেয়া হচ্ছে। শুধু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ কারণে দাম বাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের গড় সরবরাহ ব্যয় ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাবে পিডিবি পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত ৪ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রি করে। এতে দেশের একক পাইকারি বিদ্যুত ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পিডিবির ইউনিট প্রতি আর্থিক লোকসান ৭২ পয়সা। চলতি অর্থ বছর বা ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পিডিবি পাইকারি বিদ্যুতের প্রাক্কলিত সরবরাহ ব্যয় ধরেছে ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ৯৯ পয়সা। এ হিসেবে ইউনিট প্রতি লোকসান হবে ১ টাকা ৯ পয়সা। এই বিপুল আর্থিক ক্ষতি সমন্বয় করার জন্যই পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন। তারা বলছেন, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি যেসব ব্যয় বিবেচনা করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে সেগুলোর ভিত্তি নেই। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি দামে তেল কিনে, ভর্তুকিকে লোন বিবেচনা করে ও ব্যয়বহুল জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের মতে, বাড়তি ও অযাচিত ব্যয় বাদ দিলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে কমবে।

বিদ্যুত খাতে লোকসান কমানোর উদ্দেশে বারবার গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির যুক্তি আমাদের বোধগম্য নয়। সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুতের বিল বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে। সে সব অর্থ আদায় করে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা কেন নেয়া হয় না এমন প্রশ্নও জনমনে রয়েছে। বছর শেষে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপে ফেলবে। কারণ নতুন বছরের শুরুতে অভিভাবকদের ওপর সন্তানদের পড়াশোনা বাবদ এমনিতেই বাড়তি খরচের চাপে পড়তে হয়। বিদ্যুতের বাড়তি মূল্য এর সাথে সংযুক্ত হলে তা বহন করা আরো কষ্টকর হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। সুতরাং এই মুহূর্তে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করাকেই যৌক্তিক।