শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় চলছে জমকালো প্রস্তুতি

জহির রায়হান সোহাগ: নীল আকাশে সাদা মেঘ আর বাতাসের সাথে কাশফুলের খেলা, শিউলী ফুলের মন মাতানো গন্ধ- এ সবই আগাম জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। মাত্র কয়েক দিন পরেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করবেন তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। অশুভ শক্তির বিনাশ করতেই দেবী দুর্গা ধরণীতে আসেন বলে মনে করেন হিন্দু সম্প্রদায়। দেবীর আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাঁরা। পূজাকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। নিপুণ হাতে জেলার পূজা ম-পগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন শিল্পীরা। বাকি শুধু রং তুলির কাজ। আর কিছুদিন পরই ম-পগুলোতে প্রতিমার শৈল্পিক রূপ দেয়ার জন্য ব্যস্ত সময় পার করবেন কারু ও প্রতিমা শিল্পীরা।
এদিকে পূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। আর ক’দিন পরই ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি ও আরতিতে মুখরিত হবে জেলার ম-পগুলো। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দুর্গা পূজার আমেজ এখন সর্বত্রই। এ বছর দেবী দুর্গা নৌকায় চড়ে পৃথিবীতে আসবেন। যাবেন ঘোড়ায় চড়ে। তাই দেবী দুর্গাকে বরণ করে তাদের নানা আয়োজন। পুরাণ মতে-রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এ পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হতো। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রাম চন্দ্র দুর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এ পূজাকে হিন্দু মতে অকালবোধনও বলা হয়। এই অকালবোধনে শারদীয় দুর্গা উৎসবকে ঘিরে নানা আয়োজনে ব্যস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। অশুভ শক্তি দমনে আসা দেবীর কাছে শান্তি কামনা করবেন বলে জানালেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠিতে দেবী বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মন্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে আনুসঙ্গিক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন আয়োজকরা। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক কিংকর কুমার দে জানান, বিভিন্ন মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বাকি রং তুলির কাজ। এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ম-প এলাকা জুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। যা নিয়ন্ত্রণ করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও কমিটির সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গায় এবার ৯৭ টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৯ টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৭টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৯টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২২টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ে ৩টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উৎযাপনের জন্য নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি নজরদারিতে থাকবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুল মোমেন। পূজা ম-প এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি। দেবী দুর্গার আগমনে বিশ্ব জুড়ে বইবে সুখ সমৃদ্ধি এ প্রত্যাশা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।