চালককে হত্যা করে অটো ছিনতাইচক্রের ৪ হোতার মুখোশ উন্মোচন

আদালতে আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের কলিম মোল্লার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ার অটোচালক কামরুল ইসলামকে হত্যা করে অটো ছিনিয়ে নেয়ার কয়েকদিন আগেই পরিকল্পনা করে কয়রাডাঙ্গার ৪ জন। এদেরই একজন কলিম মোল্লা। তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে, কবে কখন কিভাবে ভাড়ায় নিয়ে চালককে হত্যার পর অটো ছিনিয়ে নেয়া হয় তার বর্ণনা দিয়েছেন।
পুলিশ উপোরক্ত তথ্য দিয়ে বলেছে, চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড়ের ইজিবাইকচালক কামরুল হত্যা মামলার আসামি কলিম মোল্লা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল রোববার আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পুলিশ তাকে হাজির করলে নিজেকে জড়িত করে তিনি পরিকল্পিত ওই হত্যাকা-ের স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। তবে হত্যাকা-ের আগে সন্ধ্যায় ওই অটোতে থাকা নারীর এখনও পর্যন্ত হদিস মেলেনি।
পুলিশসূত্রে জানা গেছে, আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে গিয়ে গ্রেফতারকৃত কলিম মোল্লা (৩০) জানান, গত ২৮ আগস্ট দিনগত রাতে তারা ইজিবাইকচালক কামরুলকে হত্যার কয়েকদিন আগে ওই হত্যাকা-ের নীলনকশা তৈরি করেন। ইজিবাইকচালককে চূড়ান্তভাবে হত্যার আগে কীভাবে ওই নির্মম হত্যাকা- ঘটাবেন তার প্রস্তুতিও করে নেন। তারা ২৮ আগস্টের কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে কিছুটা বেশি ভাড়া দেয়ার লোভ দেখিয়ে ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। তবে ওইদিন ভাড়া পরিশোধ করেনি তারা। ১ম দিন ভাড়া পরিশোধ না করে জানিয়েছিলেন আগামীকাল ভাড়া নেবেন, তখন একবারে ২ দিনের টাকা পরিশোধ করে দেবেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনামাফিক গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় কলিম মোল্লাসহ আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের জামায়াত আলীর ছেলে আকরাম আলী, লিয়াকত আলীর ছেলে মিনাজ আলী ও রমজান আলীর ছেলে মাসুদ রানা চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ১ হাজার টাকায় ভাড়া মিটিয়ে আবারও ওই ইজিবাইকচালক ভাড়া নিয়ে হাটবোয়ালিয়ায় আসেন। পরে হারদীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রাতে শ্যামপুর-যাদবপুর গ্রামের বালির ক্যানেলপাড়ে নিয়ে গিয়ে কামরুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। লাশ ক্যানেলের পানিতে ফেলে রেখে ইজিবাইক নিয়ে পালান। তারা ইজিবাইকটি মেহেরপুর শহরে রানার বাড়িতে রেখে আসেন।
এদিকে, ওই হত্যাকা-ের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, গত পরশু অর্থাত শনিবার রাতে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ কলিম মোল্লাকে গ্রেফতার করে। কলিম মোল্লা কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ইলিয়াস মোল্লার ছেলে। গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ মেহেরপুরের রানার বাড়ি থেকে ওই ইজিবাইকটি উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কতিপয় কৃষক গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা বালির ক্যানেল নামের জিকে সেচ প্রকল্পের ক্যানেলে পাটের জাগ দেখতে গেলে পানিতে লাশ ভাসতে দেখেন। ঘটনাটি সাথে সাথে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে জানালে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) লুতফুল কবীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সকাল ৯টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়। সে সময় উদ্ধারকৃত যুবকের লাশের পরিচয় কেউ বলতে পারেননি। পরে এ লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের দৌলতদিয়াড় থেকে আলমডাঙ্গা থানায় ছুটে যান আব্দুস সালাম। তিনি নিজের ছেলে কামরুল ইসলামের লাশ দাবি করেন। কামরুলের হত্যার ৯ দিন পর তার মা ৭ মাসের শিশুসন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন।