প্রমাণ না থাকলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না মিয়ানমার

স্টাফ রিপোর্টার: নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ বা কাগজপত্র না থাকলে তাদের আর ফিরিয়ে নেবে না মিয়ানমার।
দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপদেষ্টা ইউ থাং টুন বলেছেন, যাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ নেই তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে না। এটা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, তারা বহু বছর ধরে মিয়ানমারে বাস করেছেন। যদি এটি সত্য প্রমাণিত হয় তারা ফিরে আসতে পারবেন। অন্যথায় নয়। বৈঠক শেষে বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ খবর ছেপেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
তিনি নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের নিরাপত্তার কোনো বিঘ্ন হবে না। সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এমন অনেক মুসলিম আছেন যারা রাখাইনে হামলার শিকার হননি। তবে জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা জানাচ্ছেন, হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন। যাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে অনেকেই আহত-গুলিবিদ্ধ। এছাড়া রাখাইনে মারা গেছেন আরও বহু মানুষ; এর সঠিক হিসাব এখনও জানা যায়নি। সেখানে জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরাও কাজ করতে পারছেন না।
মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতারেস। চিঠিতে বলা আছে, উত্তেজনা প্রশমনে পদক্ষেপ নেয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। এর আগে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তাছাড়া মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। ইতোমধ্যে তার স্ত্রী, ফার্স্ট লেডি আমিন বাংলাদেশ সফর করছেন। সঙ্কট সমাধানে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘকে খোলা চিঠি দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী বাঙালি ড. মুহাম্মদ ইউনূসও।
এদিকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার যারা বাংলাদেশে ঢুকেছেন তাদের প্রতিজনই ডকুমেন্ট নিয়ে এসেছেন। সরকারও এর প্রাথমিক লিস্ট করে রেখেছে। ডকুমেন্ট কী ধরনের হতে পারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক ধরনের প্রমাণপত্রই হতে পারে। স্কুল-কলেজে পড়াশোনার কাগজ। দোকানে কেনাকাটার বিল দেয়া, সরকারি কোনো খাতে টাকা জমা কিংবা বিদ্যুত-পানির বিল দেয়া থাকলে সেইসব কাগজ ব্যবহৃত হতে পারে। বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন করার জন্য। সরকার এজন্য কাজ করছে। মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের যেমন আশ্রয় দেয়া হয়েছে তেমনি ফিরিয়েও দেয়া হবে। এছাড়া পুরো বিশ্ববাসী জানে তারা কোথা থেকে এসেছেন। তারপরও যদি মিয়ানমার প্রমাণ করতে পারে তারা পালিয়ে আসেনি তবে তারা বাংলাদেশে থেকে যাবে। অন্যদিকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের অব্যাহত স্রোত সইবার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই বলে ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এজন্য তিনি জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট, লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। আমরা বিষয়টাকে একদিকে যেমন মানবিক দৃষ্টিতে দেখছি অন্যদিকে যেভাবে রোহিঙ্গাদের স্রোত আসছে তার জোরালো প্রতিবাদ করছি। এরইম?ধ্যে সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে চারবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
নাফ নদীতে আরও ১১  রোহিঙ্গার লাশ কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী থেকে আরও ১১ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছ; যাদের মধ্যে এক নারী ও শিশু রয়েছে। টেকনাফ থানার ওসি মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন খান জানান, বুধবার সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন সময় সাবরাং ইউনিয়নে নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ, তুলাতলী পয়েন্ট ও বাহারছড়া সমুদ্র উপকূল থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় সেগুলো উদ্ধার করে। তিনি বলেন, এর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ থেকে তিনজন, বাহারছড়া থেকে চার জন ও তুলাতুলি পয়েন্ট থেকে চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে এক নারী ও এক শিশু রয়েছে। লাশগুলো মিয়ানমারের দিক থেকে ভেসে এসেছে বলে স্থানীয়রা তাদের জানিয়েছেন। এ নিয়ে গত দুই সপ্তায় ৮৪ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হলো বাংলাদেশে। এছাড়া আরও দুই রোহিঙ্গা নারী বুধবার অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।