গয়না চুরির অভিযোগে প্রতিবেশী স্কুল পড়ুয়া কিশোরকে রাতভর নির্যাতন করে স্ট্যাম্পে লিখিত স্বীকারোক্তি ও স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: স্ত্রীর গয়না চুরির অভিযোগ তুলে প্রতিবেশীর স্কুল পড়ুয়া ছেলে ডেকে নিয়ে সারারাত ধরে নির্যাতন করে স্ট্যাম্পে লিখিত স্বীকারুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আলমডাঙ্গার হারদীর রশিদুল ইসলাম নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। মারাত্মক আহত স্কুলছাত্র তামিম এখন হারদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নির্যাতনের স্বীকার স্কুলছাত্র ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী গ্রামের থানাপাড়ার কটার ছেলে রশিদুল ইসলাম (২৮) বসুন্ধরা গ্রুপে চাকরি করেন। তার কর্মস্থল চট্টগ্রাম। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে তিনি প্রতিবেশী স্বপন আলীর ছেলে ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর তামিমকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এরই মধ্যে রশিদুল ইসলামের স্ত্রীর হাতের সোনার রুলিবালা চুরি হয়ে যায়। সন্দেহের তীর ছোড়েন কিশোর তামিমের ওপর। গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে রশিদুল ইসলাম স্কুলছাত্র তামিমকে ডেকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথপুরের এক পাটক্ষেতে। সেখানে নিয়ে চুরির অভিযোগ তুলে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হয় গয়না ফেরত দিতে। তামিম গয়না চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে। তামিম নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের নানা চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সে কুমারী গ্রামে এক কবিরাজের কাছে যায় আসল চোর শনাক্তের জন্য। কবিরাজের বাড়ি থেকে রশিদুল ইসলাম তাকে তুলে নিয়ে যায় নিজ বাড়িতে। ঘরে নিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে তাকে বেদম পেটায়। রাত গভীর হলে ছাদের ওপর নিয়ে পেটায়। পরে হারদী কলেজ চত্বরে নিয়ে ২ দফা ও কামালপুর গ্রামে নিয়ে আরেক দফা মারধর করে চুরির স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রচ- মারধর থেকে বাঁচতে এক পর্যায়ে তামিম চুরির কথা স্বীকার করে। সে সময় তাকে শিখিয়ে দেয়া হয় কি বলতে হবে। এমনকি রশিদুল কি প্রশ্ন করলে উত্তরে কি বলতে হবে সব শিখিয়ে দেয়া হয় তামিমকে। ঘরে নিয়ে রাত ২টার পর তামিমের স্বীকারোক্তি মোবাইলফোনে রেকর্ড করা হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, রাতে তামিম বাড়ি না ফিরলে খোঁজ শুরু করেন তার পিতা-মাতা। রাত ১১টার দিকে তারা রশিদুলের বাড়ি ছুটে যান। কিন্তু তাদেরকে ছেলের নিকট পৌঁছুতে দেয়া হয় না। জোর করে তামিমের মা সুজাতা খাতুন ছেলের নিকট যেতে চাইলে তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সে সময় তামিমের পিতা-মাতা চুরির বিষয়টি মেনে নিয়ে গয়নার দাম পরিশোধ করে দেবেন এমন প্রতিশ্রুতি দেন। গয়নার দাম বাবদ ৭০ হাজার টাকার দেয়ার প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে সকালে স্ট্যাম্পে তামিমের স্বীকারোক্তি লিখে তাতে স্বাক্ষর করিয়ে তাকে পিতা-মাতার হাতে তুলে দেয়া হয়। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় তামিমকে হারদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তামিম গয়না চুরি করলে স্বীকারোক্তি আদায়ের পরেও কেন তা উদ্ধার করতে পারেনি? এমন প্রশ্ন তুলে এলাকাবাসী জানান, বর্বরোচিত নির্যাতনের স্বীকার স্কুলছাত্র তামিমের পিতার বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামে। বিয়ের পর পিতৃমাতৃহীন জামাইকে তার শ্বশুর-শাশুড়ি নিজ গ্রামে রেখে দেন। তাদের গ্রামে বর্তমানে খুব বেশি আত্মীয়-স্বজন নেই। এই সুযোগ নিয়ে রশিদুল গ্রুপ এমন বর্বরোচিত নির্যাতন চালানোর সাহস দেখিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। এ ঘটনায় নির্যাতনের স্বীকার স্কুলছাত্রের পিতা গতকাল আলমডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।