হাজি মোজাম্মেল হকের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি মোজাম্মেল হক ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না………….রাজেউন)। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বেশ কিছুদিন বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। ব্যাংককের হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে রাখার সপ্তাহখানেকের মাথায় গতকাল সোমবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯০ বছর।
তিন ছেলের মধ্যে গতকাল ছোট ছেলে আতিকুল হক মিথুন দেশে থাকলেও অপর দু ছেলে রফিকুল হক মুন্নু সিঙ্গাপুর ও মেজ ছেলে মাহবুবুল হক তাল্লু কানাডায় অবন্থান করছিলেন। আজ মঙ্গলবার তারা দুজনেই দেশে ফিরে তিন ভাই সিদ্ধান্ত নেবেন জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ ও দলীয় কার্যালয়ে নামাজে জানাজা শেষে কখন নাগাদ চুয়াডাঙ্গায় নেয়া হবে। চুয়াডাঙ্গাতেই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানালেও পরিবারের তরফে দাফনের দিনক্ষণ নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। তবে আগামীকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গায় দাফন করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ইমার্জেন্সি সড়কে বসবাস করতেন হাজি মো. মোজাম্মেল হক। জীবনের শেষদিনগুলোতেও ঢাকায় ছেলের সাথে থাকতে তার মন বসেনি। বয়সের ভারে ন্যূয়ে পড়লেও চুয়াডাঙ্গার বাসাতেই থাকতেন। শিল্প হিসেবে প্রথম স্থাপিত বঙ্গজ লিমিটেডেও সময় কাটাতেন। মাস দুয়েক আগে তার হৃৎপি- স্বাভাবিক ক্ষমতা হরাতে শুরু করে। স্বাসকষ্টও দেখা দেয়। দ্রুত নেয়া হয় ঢাকায়। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখার এক পর্যায়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে নেয়া হয় থাইল্যান্ডের ব্যাংকস্থ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন নেয়ার পর প্রথম দিকে তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও পরে অবনতি ঘটতে তাকে। ঈদের সপ্তাহখানেক আগে তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়। গতকাল সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু অসুস্থ নেতা শিল্পপতি হাজি মোজাম্মেল হককে দেখতে যান। বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে ৪ মেয়েসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে চাকরি মধ্যদিয়ে কর্মজীবন শুরু হলেও তিনি ব্যবসার মাধ্যমে স্বপ্নের সিঁড়ি মাড়িয়ে ওঠেন সাফল্যের শীর্ষে। বঙ্গজ-তাল্লু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি যেমন একাধিকবার পেয়েছেন সিআইপি সম্মান, তেমনই তিনি রাজনীতিতেও পেয়েছেন সফলতা। ১৯৯৬ সালের দু দফা নির্বাচনে তিনি দুবার ও ২০০১ সালের নির্বাচনে একবার মোট তিনবার চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি প্রাণিসম্পদক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়ে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। দলীয়সূত্রে জানা গেছে, তিনি ১৯৭৮ সালে জাগ দল প্রতিষ্ঠালগ্নে চুয়াডাঙ্গার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরাজিত হন। ওই বছরেই তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দু যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি সভাপতিই ছিলেন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলে তাকে এক নম্বর সদস্য রাখা হলেও রাজনীতিতে তেমন আর সক্রিয় থাকেননি।
হাজি মোজাম্মেল হক চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি বঙ্গজ-তাল্লু গ্রুপের এমডি এবং রেডিও টুডে’র চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে চুয়াডাঙ্গায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই জানতে চান, কখন কোথায় দাফন করা হবে। এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, পিতার মৃত্যুতে ছোট ছেলে মিথুন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তারও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। অপর দু ছেলে রফিকুল হক তাল্লু ও মাহবুব উল হক মুন্নু দেশের বাইরে। পিতার মৃত্যুর খবরে তারাও দেশের পথে রওনা হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে দেশে পৌঁছুনোর পরই সিদ্ধান্ত হবে কখন নাগাদ মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গায় নেয়া সম্ভব হবে।